অধুনালুপ্ত দৈনিক আজাদ-এর হয়ে ১৯৬৭-১৯৬৯ এই তিন বছরের সময়পর্বে সাহিত্যিক-সাংবাদিক ও একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবী আ ন ম গোলাম মোস্তফা তৎকালীন পূর্ববাংলার কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিলেন। পরে তা ১৯৭০ সালে অন্তরঙ্গ আলোকে শিরোনামে গ্রন্থবদ্ধ হয়ে প্রকাশ পায় চট্টগ্রামের প্রখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা বইঘর থেকে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. কাজী মোতাহার হোসেন, প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ, মোহম্মদ বরকতুল্লাহ, ড. কুদরত-ই-খুদা, ড. এনামুল হক, মুহম্মদ মনসুরউদ্দিন, জসীমউদ্দীন, সুফিয়া কামাল, মুনীর চৌধুরী, আবুল ফজল ও আবদুল কাদির—কিংবদন্তিসম এই দ্বাদশ মনীষীর দুর্লভ এসব সাক্ষাৎকারে যেমন মিলবে তাঁদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, তেমনি পাওয়া যাবে সেকালের পূর্ববাংলার সামাজিক ইতিহাসের বহু অভাবিত উপাদান। যা থেকে পাঠক বাঙালি মুসলমানের বেড়ে ওঠার নানা সঙ্গ-অনুষঙ্গ সম্পর্কে জানবেন, অতীতের সাম্প্রদায়িক সমাজের আবহের খোঁজ পাবেন ও শুনবেন ভেদাভেদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু অসামান্য মানুষের কথা। তৎকালীন পূর্ববাংলা অথবা আজকের বাংলাদেশের সাক্ষাৎকার-সাহিত্য ও সংবাদ-সাহিত্যের পরিপ্রেক্ষিতে বইটি নিঃসন্দেহে পথিকৃতের দাবিদার। যখন এই বাংলায় সাক্ষাৎকার নেওয়ার চল ততটা জনপ্রিয় ছিল না, তখন অন্তরঙ্গ আলোকে রীতিমতো অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করেছিল—এ কথা বললে অত্যুক্তি হয় না। বর্তমানের আগ্রহী পাঠকের কথা ভেবেই এই গুরুত্বপূর্ণ বইটির পুনঃপ্রকাশ।
.
‘অন্তরঙ্গ আলোকে’ বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ বারোজন বুদ্ধিজীবী-মনীষীর জীবনকথামূলক সাক্ষাৎকারের সংকলন। সাহিত্যিক-সাংবাদিক আ ন ম গোলাম মোস্তফা নতুন রীতিতে নেওয়া এসব সাক্ষাৎকারে সাহিত্যিকদের স্মৃতিকথার সঙ্গে তাঁদের যুগটিকেও পরম নিষ্ঠায় ধরে রেখেছেন। অনিবার্যভাবে এর ওপর ছায়া ফেলেছে দেশ, কাল ও সমাজ। প্রতিটি সাক্ষাৎকারকে একটি নিটোল গল্পের রূপ দেওয়ায় এতে যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এই বইটি আগ্রহী পাঠকের যেমন ভালো লাগবে, তেমনি ইতিহাস ও সাহিত্যের গবেষকদেরও কাজে আসবে।
Book Name : | অন্তরঙ্গ আলোকে |
Authors : | আ ন ম গোলাম মোস্তফা |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition April 2025 |
ISBN Number: | 978-984-95043-4-4 |
Total Page | 120 |
আ ন ম গোলাম মোস্তফা লেখক ও সাংবাদিক, একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবী। পুরো নাম আবু নূর মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা। ডাকনাম মনু। জন্ম ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২৪ অগ্রহায়ণ নীলফামারী জেলার ডোমার থানার পাঙ্গা গ্রামে। দিনাজপুর জেলা স্কুল থেকে ১৯৫৮ সালে প্রবেশিকা এবং ১৯৬০ সালে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। পরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ। ছাত্রজীবনেই আ ন ম গোলাম মোস্তফা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং দিনাজপুরে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। ১৯৬২ সালে আইউববিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য আটক হলে আট মাস কারাভোগ করেন, মুক্তিলাভের এক মাস পর ফের গ্রেপ্তার হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময়েই দৈনিক সংবাদ পত্রিকার বার্তা বিভাগে সাংবাদিক হিসেবে তাঁর কর্মজীবনের শুরু। ১৯৬৬ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং এর পাশাপাশি আজাদ গ্রুপের মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বে নিয়োজিত হন। এ সময় তিনি অন্তরঙ্গ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকাও সম্পাদনা করতেন। ১৯৬৯ সালে দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় প্রধান সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন এবং পত্রিকাটির সাহিত্য বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর ভোরে পাকিস্তান আর্মি এবং আল বদর বাহিনীর লোকেরা ঢাকাস্থ গোপীবাগের ৮৯/সি ভাড়া বাসা থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।