বাংলা কথাসাহিত্যে বৈপ্লবিক ধারার সূচনা ঘটে তাঁর হাতে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়েই পাঠক প্রথম স্বাদ পায় বিশ্বযুদ্ধোত্তর মধ্যবিত্ত মানসের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী গণমানুষের সংগ্রাম এবং প্রবল নিয়তিবাদের। মানিক সর্বার্থেই ছিলেন বাংলাসাহিত্যের অনন্য এক যুগপুরুষ। ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষণ ও মার্কসীয় শ্রেণিসংগ্রামের তাত্ত্বিক পরিসরের মাঝেও পাঠককে দিয়েছেন অসামান্য সব অনুভূতির সন্ধান। তাঁর একমাত্র ও সম্পূর্ণ কিশোর উপন্যাস মাঝির ছেলে।
বাংলাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে বিবেচিত মানিকের একেবারেই দলছুট এ উপন্যাসের অলংকরণ ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্যের। পত্রভারতীর প্রকাশনার প্রচ্ছদ করেছিলেন সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়।
মাঝির ছেলের আখ্যান কিশোর নাগাকে নিয়ে। মা—বাবা নেই। মাঝির কাজ পায় স্থানীয় সামন্ত যাদববাবুর নৌকায়। স্বপ্ন দেখে জাহাজে ভাসার, ভাসানোর। সত্যি হয় তাও। নাগার চাকরিও হয়, সঙ্গে তৈরি হয় এক নতুন জগৎ। বন্ধু জোটে। কণিকা, রূপা। আসে প্রবল দৈব। ঝড়ের মাঝে নাগার মনে পড়ে ফেলে আসা আটখামার স্টিমারঘাটের কথা। হারুমাঝির কথা। এদিকে সমুদ্র যে নাগাকে মনপ্রাণ দিয়ে ডাকেÑ কী হবে তার?
প্রমত্তা পদ্মা, পদ্মাপাড়ের গ্রাম, লঞ্চঘাট, ধনী—দরিদ্রের ছবি, গ্রামের মানুষের সারল্য, সমুদ্রের ভয়াল রূপ মিলে মাঝির ছেলে এক অন্যরকম সারল্যময় মানিকের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় পাঠককে। অভিলাষী কিশোরদের অবশ্যপাঠ্য এ উপন্যাস পাঠককে সম্মুখীন করে, ধাবিত করে বাস্তবতায়।
Book Name : | মাঝির ছেলে |
Authors : | মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition, July 2022 |
ISBN Number: | 9789849673545 |
Total Page | 80 |
জন্ম ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মে বিহারের সাঁওতাল পরগনা, বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা শহরে। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরের বর্তমান লৌহজংয়ে। তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তার প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মুহূর্তে বাংলা কথাসাহিত্যে যে কয়েকজন লেখকের হাতে সাহিত্যজগতে নতুন এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর রচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, নিয়তিবাদ ইত্যাদি। ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষণ ও মার্কসীয় শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্ব দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন যা তাঁর রচনায় ফুটে উঠেছে। জীবনের অতি ক্ষুদ্র পরিসরে তিনি রচনা করেন চল্লিশটি উপন্যাস ও তিনশ ছোটগল্প। তাঁর রচিত পুতুলনাচের ইতিকথা, দিবারাত্রির কাব্য, পদ্মা নদীর মাঝি ইত্যাদি উপন্যাস ও অতসীমামী, প্রাগৈতিহাসিক, ছোটবকুলপুরের যাত্রী ইত্যাদি গল্পসংকলন বাংলাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে বিবেচিত হয়। ইংরেজি ছাড়াও তাঁর রচনাসমূহ বহু বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। দাম্পত্যসঙ্গী : কমলা দেবী। মৃত্যু : ৩ ডিসেম্বর ১৯৫৬ সালে।