বইখানির নাম “গড্ডলিকা প্রবাহ”। ভয় ছিল পাছে নামের সঙ্গে বইয়ের আত্মপরিচয়ের মিল থাকে, কেননা সাহিত্যে গড্ডলিকা প্রবাহের অন্ত নাই। কিন্তু সহসা ইহার অসামান্যতা দেখিয়া চমক লাগিল। চমক লাগিবার হেতু এই যে, এমন একখানি বই হাতে আসিলে মনে হয় লেখকের সঙ্গে দীর্ঘকালের পরিচয় থাকা উচিত ছিল। সকালে হঠাৎ ঘুম ভাঙিয়া যদি দ্বারের কাছে দেখি একটা উইয়ের ঢিবি আশ্চর্য ঠেকে না, কিন্তু যদি দেখি মস্ত একটা বটগাছ তবে সেটাকে কি ঠাহরাইব ভাবিয়া উঠা যায় না। লেখক পরশুরাম ছদ্মনামের পিছনে গা ঢাকা দিয়াছেন। ভাবিয়া দেখিলাম, চেনা লোক বলিয়া মনে হইল না, কেননা লেখাটার উপর কোনো চেনা হাতের ছাপ পড়ে নাই। নূতন মানুষ বটে সন্দেহ নাই কিন্তু পাকা হাত।
... ... ...
লেখার দিক হইতে বইখানি আমার কাছে বিস্ময়কর, ইহাতে আরো বিস্ময়ের ধতর্ব আছে, সে যতীন্দ্রকুমার সেনের চিত্র। লেখনীর সঙ্গে তুলিকার কী চমৎকার জোড় মিলিয়াছে, লেখার ধারা রেখার ধারা সমান তালে চলে, কেহ কাহারো চেয়ে খাটো নহে। চরিত্রগুলো ডাইনে বামে এমন করিয়া ধরা পড়িয়াছে যে, তাহাদের আর পালাইবার ফাঁক নাই।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
Book Name : | গড্ডলিকা |
Authors : | রাজশেখর বসু |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition, February 2022 |
ISBN Number: | 978-984-95786-5-9 |
Total Page | 104 |
রাজশেখর বসু ১৬ মার্চ ১৮৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ছদ্মনাম পরশুরাম। কর্মসূত্রে বৈজ্ঞানিক। পরশুরাম ছদ্মনামে বাংলা সাহিত্যে কৌতুক ও ব্যঙ্গ গল্প রচনার জন্য খ্যাতনামা। স্বনামে বহু বিষয়ে চিন্তাগভীর প্রবন্ধাদি রচনা করেন। চলন্তিকা (১৯৩৭) নামক অভিধান এবং রামায়ণ (১৯৪৬), মহাভারত (১৯৪৯) এবং মেঘদূত (১৯৪৩) গ্রন্থের অনুবাদ; লঘুগুরু (১৯৩৯) এবং বিচিন্তা (১৯৫৫) প্রভৃতি প্রবন্ধ সংকলন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তাঁর চলন্তিকা বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিধান এবং শিক্ষিত বাঙালির গৃহে অবশ্য—লভ্য গ্রন্থ। রামায়ণ ও মহাভারতের সংক্ষিপ্ত এবং আধুনিক ভাষারীতিতে অনুবাদ তাঁর মনীষার আর একটি প্রকাশ। রাজশেখরের সাহিত্যিক প্রতিভার নিদর্শন তাঁর গল্পসংগ্রহ। পরশুরাম ছদ্মনামে ভারতবর্ষ পত্রিকায় ১৯২২—এ বিরিঞ্চিবাবা নামে একটি ব্যঙ্গপ্রবণ ও সরস গল্প প্রকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বাংলা সাহিত্যের বোদ্ধা পাঠক ও স্রষ্টাদের দ্বারা অভিনন্দিত হন। গড্ডলিকা (১৯২৪), কজ্জলী (১৯২৭), হনুমানের স্বপ্ন (১৯৩৭) প্রভৃতি গল্পগ্রন্থ তাঁর প্রতিভার শ্রেষ্ঠ প্রকাশ। নির্মল সংযত শুভ্র হাস্যের সঙ্গে তীব্র ব্যঙ্গ মিশে বাংলা সাহিত্যের গল্পলোকে তাঁর রচনাগুলো এক নতুন শক্তি সংযোজন করেছিল। তাঁর গল্পগুলোর সঙ্গে বন্ধু যতীন্দ্রকুমার সেনের অপরূপ চিত্রগুলো ছিল পরস্পরের পরিপূরক। ভণ্ডামি, নীচতা, অন্যায় অবিচার, নাগরিক—ন্যাকামি এবং গ্রাম্য আধুনিকতা সমস্ত কিছুর ওপরই তাঁর তীব্র কশাঘাত। অথচ জীবনের প্রতি ভালোবাসায় এবং কৌতুকবোধে তাঁর রচনা সুখপাঠ্য। বাংলা গদ্যের পরিচ্ছন্ন, স্নিগ্ধ ও স্বচ্ছরূপ সৃষ্টিতে রাজশেখর—পরশুরাম বাংলাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী। তিনি ২৭ এপ্রিল ১৯৬০ সালে মৃত্যুবরণ করেন।