ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের প্রতিবাদে দ্রোহ ছিল তাঁর একান্তই নিজস্ব, নিখাদ। সাম্যবাদী- সব্যসাচী কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিবাদী কণ্ঠ পৌঁছেছিল দেশের মুক্তিকামী-স্বাধীনতাপ্রিয় প্রতিটি মানুষের চিত্তে-চেতনায়। তাঁর একটির পর একটি বই, কবিতা, গান বাজেয়াপ্ত করেছে শাসকগোষ্ঠী। এক বছরেরও বেশি কারাদণ্ড ভোগ করেছেন যিনি। অধিকারের দাবিতে কারাগারে অনশন করেছেন চল্লিশ দিন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে নজরুলই একমাত্র প্রতিবাদী কবি যিনি নিজের লেখার জন্য কারাবরণ করেছেন। যাঁর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিন্তিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টেলিগ্রামে লিখেছেন-অনশন ভাঙো, বাংলা সাহিত্য তোমাকে চায়। অথচ শুধু সাহিত্যের জন্য বেঁচে থাকতে চাননি নজরুল। বিশ্বাস করতেন-সাহিত্যের চেয়েও বড়, জীবনের দাবিতে।
১৯২২ সালের ২৫ অক্টোবর প্রকাশ পায় ‘অগ্নি-বীণা’। বিদ্রোহী-সাম্যবাদী নজরুলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ। যেন বিশ্বাস ছাড়ায়ে নজরুল উত্থিত হলেন চির-উন্নত শির নিয়ে। শুদ্ধতাবাদী বুদ্ধদেব বসুও লিখেছেন- ‘রবীন্দ্রনাথের পরে বাংলা ভাষায় তিনিই (নজরুল) প্রথম মৌলিক কবি।’ যাঁর আগমনী নিয়ে প্রেমেন্দ্র মিত্র লিখেছেন-আপন বীণাতন্ত্রে কী ঘোষিলে বুঝিলাম নাহি, বুঝিলাম জয় তব জয়। ‘অগ্নি-বীণা’র অনন্য ঝংকারে বাংলা সাহিত্যের মোড় ফিরল, আধুনিকতার ছোঁয়া লাগল তাতে।
.
.
চোখে বিদ্যুৎ, গলায় বজ্র তাঁর—দুর্দম ঝঞ্ঝার—দেখেছি আমরা নিখুঁত প্রতিচ্ছবি। অগ্নিবীণার কবি। তাঁর জয়ধ্বনিতে রণিত বাংলার রাজপথ, বাঙালির হৃদয়। মোসলেম ভারতে, বিজলীতে, প্রবাসীতে, সাধনায়, ধূমকেতু, বসুমতিতে আর কল্লোলে আগমনী বেজে উঠেছিল তাঁর কবিতার। পাঠক-সমালোচকদের বিস্মিত-বিমূঢ় করে অফুরন্ত সৃষ্টিপ্রবাহের বন্যায় দুকূল
ভাসিয়ে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলার, বাঙালির দুর্দিনে যিনি গর্জে ওঠেন, প্রেমে তিনি অফুরান। সাম্যবাদী-বিদ্রোহী, আমাদের জাতীয় কবি। ‘অগ্নি-বীণা’ তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। শতবর্ষ পেরিয়ে আজও অনন্য-অপূর্ব-প্রাসঙ্গিক।
Book Name : | অগ্নি-বীণা |
Authors : | কাজী নজরুল ইসলাম |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition August 2024 |
ISBN Number: | 978-984-98948-2-7 |
Total Page | 56 |
স্বাধীনতা, মানবতা, প্রেম ও বিপ্লব ছিল তাঁর অনন্য সাধারণ সাহিত্যের মূল সুর। লেখক হিসেবে ছিলেন মৌলবাদ, বর্ণবাদ, লিঙ্গবিদ্বেষ ও ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটি সংগ্রামে, আন্দোলনে, বিশেষত মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় কবি। কাজী নজরুল ইসলাম। জন্ম ১৮৯৯ সালের ২৪ মে, পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়ায়। বাংলা সাহিত্যের চিরবিদ্রোহী কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও নজরুল ছিলেন একাধারে সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, রাজনীতিবিদ, গায়ক ও অভিনেতা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ৪৯ নম্বর বাঙালি পল্টনের সৃষ্টিশীল সৈনিক নজরুল ‘লাঙল’, ‘নবযুগ’ ও ‘ধূমকেতু’র মতো সংবাদপত্রও সম্পাদনা করেছেন। কবিতার জন্য গিয়েছেন সাম্রাজ্যবাদীর কারাগারে। আদর্শের বলে লড়েছেন নির্বাচনে। অসংখ্য বিচিত্র রাগ-রাগিণীর স্রষ্টা সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে রচেছেন তিন হাজারের বেশি গান। দেশাত্মবোধক গান, শ্যামাসংগীত, গজলে তাঁর জুড়ি বাংলায় আজও নেই। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সম্মানসূচক ডি.লিট’, ভারতে ‘পদ্মভূষণ’, বাংলাদেশে ‘একুশে পদক’ ও ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’-এ ভূষিত হন তিনি। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয় চিরবিদ্রোহী কবিকে।