সেই সবুজাভ গ্রামের মনোমুগ্ধকর গতর ঢেকে গেছে। বছর পেরিয়ে যুগ এমনি করে সময় যোগ হতে হতে রূপের বদল ঘটতে থাকে ক্রমশ। চলমান প্রক্রিয়ার চাকাতে তো ঘোড়ার লাগাম জুড়ে দেয়া চলে না। মানুষ সত্যিকার অর্থে কতটা এগিয়েছে তার হিসাব তর্ক—বিতর্কে বা ভাবনার রাজ্যে আমাদেরকে আবেগিত করতে পারে; কিন্তু বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া অসম্ভব। কাজেই জীবনবৃত্তের যে বলয় আছে, তার চারপাশের পরিবেশ, পরিস্থিতি নিরিখ চিহ্নের কাছাকাছি নাও ঘেঁষতে পারে।
যে কিশোর একদা তেঁতুলিয়া নদীর দুর্বার ঢেউ, কখনো শান্ত নদীর বুকচিরে উজানমুখী বালাম নৌকোয় একগাদা গরু—মহিষের অসহায় চোখ তথা বোবা ভাষার রৌখিক হৃদটান ঠিকই বলে দিত ‘মায়া এক অলৌকিক পেন্ডুলাম’। ভেসে চলা বেবাজিয়া নৌকার বহর। পান খাওয়া ঠেঁাটে পায়ের ছন্দে নৌকার বৈঠা বেয়ে চলা সৃজন শিল্পে আকৃষ্ট হয়ে ওঠা কলমের বুননে শব্দের মালা গাঁথার ভিতর তৃপ্ততা, অসাধারণ অনুভূতির মুগ্ধতা এ. কে. মকবুল আহমেদকে কথা বলতে, বলাতে বাধ্য করেছে।
দিনের আলোতে রাতের মানুষকে একই অঙ্গে রোদ—বৃষ্টি, ঝড়ের মুখোমুখিতে দাঁড় করিয়ে আদিমের নির্যাসের পাত্রে ঢাললে শুধুই বিবেক তাড়িত একজন প্রশাসক, কবি, শিল্পীর অভিজ্ঞতার আলোকে খাঁটি দেশপ্রেমিক, মুক্তিকামী নিরেট বিশুদ্ধ মানুষের প্রতিচ্ছবিই দেখতে পাব। সার্থক স্বামী, পিতা, অর্পিত দায়িত্বে নিষ্ঠা, পরিশ্রম ও আদর্শ ধারণ করে কুসংস্কার দূর হয়ে এক মানবতার দিগন্ত কামনা।
সমগ্র গ্রন্থ পাঠ করে পরতে পরতে ভালোবাসার উল্টো পিঠে মানুষের নিজ আত্মস্বার্থ, প্রতিহিংসা, ঘৃণা, কাম, মোহ প্রজ¦লিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সামছু, সরলা, নরেন, কৃষ্ণা, শ্যামল, অরুণ, ছদ্মবেশি পীর, বিনোদ প্রভৃতি চরিত্রগুলো এই সমাজ ও সংসারেরই চিত্র।
আমি গ্রন্থটির বহুল প্রচার কামনা করছি।
Book Name : | পুলিশ জীবনে যা দেখেছি |
Authors : | এ. কে. মকবুল আহমেদ |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition, February 2022 |
ISBN Number: | 978-984-96276-0-9 |
Total Page | 78 |
এ. কে. মকবুল আহমেদ এ. কে. মকবুল আহমেদ ১৯২৯ বাংলা ১৩৩৫ সালের অগ্রাহায়ণ মাসে ভোলা জেলার ভেলুমিয়া গ্রামে এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম মেছের আলী হাওলাদার, মাতা মরহুমা হাবিবা খানম। ১৯৫০ সালে মেট্রিক পাসের পর ১৯৫১ সালে পুলিশবাহিনীতে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু। প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রিন্সিপ্যাল ইব্রাহীম খাঁর অনুপ্রেরণায় সাহিত্যচর্চায় মগ্ন হন। প্রথম লেখা ‘চাষীর স্বপ্ন’ কবিতাটি প্রকাশিত হয় ১৯৫০ সালে, সাহিত্য পত্রিকা ‘ঢাকা প্রকাশে’। সেই থেকে তাঁর লেখা বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা সমূহে প্রকাশিত হয়েছে। মেহেদী হাসান ছদ্ম নামেও লিখেছেন প্রচুর। প্রথম গ্রন্থ ‘খাদেম’ (নাটিকা) প্রকাশিত হয় বাংলা ১৩৫৮ সালে। এ পর্যন্ত মকবুল আহমেদের প্রকাশিত গল্প, উপন্যাস, নাটক, আইনবিষয়ক গ্রন্থসহ মোট গ্রন্থের সংখ্যা ৩৪টি। এ ছাড়াও তিনি ৮টি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। জীবিতকালে তিনি অনেক সাহিত্য ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে জড়িত ছিলেন। তিনি খুলনা সাহিত্য পরিষদের আজীবন সদস্য এবং সাহিত্য সমাজের সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৩ সালে পটুয়াখালী জেলা প্রেস ক্লাবে অত্র জেলার সব বয়জৈষ্ঠ্য ও শ্রদ্ধাভাজন কবি খন্দকার খালেকের সভাপতিত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে এ. কে. মকবুল আহমেদকে কথাসাহিত্যিক হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। পুলিশ বিভাগেও এ. কে. মকবুল আহমেদ নিঃসন্দেহে গর্বের সম্পদ। ১৯৭১ সালে মুজিবনগর (মেহেরপুর) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকাকালীন মহাকুমা পুলিশ প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান (বীরপ্রতীক)—এর অনুপ্রেরণায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৮ সালে খুলনা মহানগর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সহকারী পুলিশ কমিশনার (সরবরাহ) পদ হতে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। মহানগরী পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৮৮ এবং পুলিশ কর্মচারী সহচর গ্রন্থ দুটি অনুবাদ করে মকবুল আহমেদ অসংখ্য পুলিশ সদস্যদের পদোন্নতিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৯১ সালের ৯ জুন তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে দুই পুত্র ও এক কন্যা রেখে গেছেন। বড় পুত্র কবির আহমেদ চিত্রশিল্পী হিসাবে যথেষ্ট সমাদৃত। কনিষ্ঠ পুত্র নাসির আহমেদও একাধারে কবি ও গল্পকার হিসাবে ইতোমধ্যে পরিচিতি লাভ করেছেন।