সতীনাথ ভাদুড়ী বহুপ্রসূ লেখক ছিলেন না। আত্মমগ্ন, প্রচারবিমুখ, স্বল্পভাষী একজন মানুষ যিনি ভাবতেন-‘দশচক্রে পড়ে’ সাহিত্যিক হয়েছেন। সতীনাথ ভাদুড়ী বাংলা ভাষাকে দিয়েছেন অমূল্য সব সম্পদ-জাগরী, ঢোঁড়াই চরিত মানস, গণনায়ক। নিজের লেখা নিয়ে নিরন্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে পরিভ্রমণ করা সতীনাথের কাননে কুসুম কলির মতো তাই ফুটে ওঠে, অচিন রাগিণী। তাঁর চতুর্থ উপন্যাস।
অচিন রাগিণী প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৫৪ সালের নভেম্বরে, কলকাতার বেঙ্গল পাবলিশার্স থেকে। প্রকাশক শচীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। মলাটে আবদ্ধ হওয়ার পূর্বে টানা আঠারো কিস্তিতে যে উপন্যাস ধারাবাহিক হিসেবে ছাপা হয় সাপ্তাহিক দেশ-এ। শিল্পী আশু বন্দ্যোপাধ্যায় করেছিলেন প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদপট। বিষয়বস্তু, পাতানো নতুনদিদিমার সঙ্গে দুই কিশোর পিলে ও তুলসীর টান-ভালোবাসার গল্প। এ উপন্যাসে কাহিনী মূল্যহীন; পাঠক-সমালোচক অচিন রাগিণীর মূল্যায়ণ করেন তিন চরিত্রের পারস্পরিক সম্পর্কের বিশ্লেষণের মাঝে।
চেতন থেকে অবচেতনলোকে চরিত্রগুলোর নিঃসঙ্গ যাত্রা, বিচ্ছিন্নতাবোধ ও বিষাদাক্রান্ত স্বীকারোক্তি, অন্তঃসংলাপ, চিন্তার আপাত স্বেচ্ছাচারী বিহারের আড়ালে সংলগ্ন আত্মকথন, আপাত শিথিল-গ্রথিত মুহূর্তের দীর্ঘ বুননে অখণ্ড জীবনবোধ উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে সতীনাথের শিল্পকৌশলে। গবেষক-অধ্যাপক অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে অচিন রাগিণী, সংকট (১৯৫৭) ও দিগ্ভ্রান্ত (১৯৬৬)-এই তিনটিই লেখক সতীনাথের ‘শেষ পর্যায়ের উপন্যাসত্রয়ী’। সতীনাথের শেষের শুরুটা হয় অচিন রাগিণী দিয়েই।
Book Name : | অচিন রাগিণী |
Authors : | সতীনাথ ভাদুড়ী |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition, May 2024 |
ISBN Number: | ISBN: 978-984-98947-6-6 |
Total Page | 160 |
সতীনাথ ভাদুড়ী। ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯০৬ সালে পূর্ণিয়ায় জন্ম, শিক্ষা—দীক্ষা এবং কর্মজীবন। প্রসিদ্ধ ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার। ওকালতি ছিল তাঁর বৃত্তি, পরে কংগ্রেসের কর্মীরূপে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন। রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে কয়েকবছর ভাগলপুর জেলে থাকেন। অগাস্ট আন্দোলনের পটভূমিকায় রচিত উপন্যাস জাগরী (১৯৪৬) প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে আলোড়নের সৃষ্টি করে। তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস ঢেঁাড়াই চরিত মানস (১ম খণ্ড ১৯৪৯, ২য় খণ্ড ১৯৫১) সতীনাথের শ্রেষ্ঠরচনা হিসেবে সমালোচক মহলে নন্দিত। তুলসীদাসের রামচরিতমানস এই উপন্যাসের অন্তর্লীন গঠন। পূর্ববিহারের সাধারণ মানুষের সুখদুঃখ, এক সাধারণ মানুষের সামাজিক—রাজনৈতিক ঘটনাচক্রের মধ্য দিয়ে নায়ক হয়ে ওঠার ইতিবৃত্ত এই মহাকাব্যের মতো বিস্তৃত ও জটিল উপন্যাসটিকে এক অসামান্য মহিমা দিয়েছে। সতীনাথের অন্যান্য রচনার মধ্যে অচিন রাগিণী (১৯৫৪), সংকট (১৯৫৭), দিগ্ভ্রান্ত (১৯৬৬) এবং চকাচকী (১৯৫৪), গণনায়ক প্রভৃতি ছোটগল্প এবং সত্যভ্রমণ কাহিনী (১৯৫১)—ফরাসি দেশ ভ্রমণ বৃত্তান্ত—উল্লেখযোগ্য। সতীনাথ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক। মানবজীবন সম্বন্ধে অন্তদৃর্ষ্টি এবং তাঁর তীক্ষè সংবেদনশীল কথনভঙ্গি তাঁকে বিশিষ্টতা দিয়েছে। ৩০ মার্চ ১৯৬৫ সালে এই মহান ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেন।