১৯৪৯-এর সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম প্রকাশ পাওয়া তিথিডোর বুদ্ধদেব বসুর সেরা উপন্যাস, আবার বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম বাংলা উপন্যাসগুলোরও একটি। শহর কলকাতা এই মহাকাব্যিক উপন্যাসের স্রেফ প্রেক্ষাপটই নয়, একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রও বটে। ইংরেজ শাসনের অন্তিম দুই দশক জুড়ে এক মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের উত্থান-পতনের কাহিনি হিসেবে একে যেমন পড়া যায়, তেমনি যুদ্ধ ও ভাঙনের উথালপাথাল ঢেউয়ের মুখোমুখি ধস্ত বাঙালি সমাজের সমষ্টিগত চিত্র হিসেবেও এ উপন্যাস সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একজন মধ্যবিত্ত বাঙালি তরুণীর বেড়ে ওঠার বয়ানের মধ্য দিয়ে এখানে কার্যত পুরো বাঙালি সমাজের দ্বিধা-বিভক্তি কিংবা সংকট-উত্তরণের সার্বিক চালচিত্র প্রতিফলিত। ছাপোষা চাকরিজীবী রাজেন মিত্রের কনিষ্ঠতম কন্যা স্বাতী এ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র, ইতিহাসের এক ঘটনাবহুল জটিল সময়ের সাক্ষী। স্বাতী একই সঙ্গে সেই বিলুপ্ত সংবেদনশীল বাঙালি নারীরও প্রতীক—যে কিনা অর্থবিত্তের অহমিকায় অন্ধ ব্যবসায়ী প্রবীর মজুমদারকে প্রত্যাখ্যান করে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় প্রাণোচ্ছল তরুণ অধ্যাপক সত্যেনকে, যার জীবনে টাকাকড়ির ঝকমারি না থাকলেও রয়েছে অঢেল বই—আছে রবীন্দ্রনাথ ও কোলরিজের কবিতা। তিথিডোর একটি ঝঞ্ঝামুখর সময়ের দলিল—পারিবারিক বন্ধন, ব্যক্তিস্বাধীনতা, প্রেম ও আত্মপ্রকাশের এক অনুপম আখ্যান। হালফিলের ভাষায় বলতে গেলে, ‘কামিং অব এজ’ ঘরানার উপন্যাসের আদর্শ নিদর্শন।
.
একটি মেয়ে শৈশব থেকে কৈশোরে এবং কৈশোর থেকে যৌবনে উন্মীলিত হলো, এই অতি সাধারণ এবং অতি আশ্চর্য ঘটনা অবলম্বন করে বুদ্ধদেব বসু সমসাময়িক বাঙালি সমাজের সম্পূর্ণ ছবি এঁকেছেন ‘তিথিডোর’ উপন্যাসে। সামাজিক পরিবর্তনের সূত্র ধরে ধীরে অগ্রসর হতে হতে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আরম্ভ, ভাঙনের সূত্রপাত এবং রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু পার হয়ে বই শেষ করেছেন জাপানি বোমায় আতঙ্কিত ১৯৪১-এর ডিসেম্বরের অন্ধকার কলকাতায়। স্বাভাবিক কবিত্বে এবং মননশীলতায় এ উপন্যাস সমৃদ্ধ, যা সর্বশ্রেণির পাঠকের উপভোগ্য এবং অভিজ্ঞতার তারতম্য অনুসারে বিভিন্ন বয়সের পাঠক বিচিত্রতর, বহুলতর আনন্দের আস্বাদ পাবেন।
Book Name : | তিথিডোর |
Authors : | বুদ্ধদেব বসু |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition June 2025 |
ISBN Number: | 978-984-95043-7-5 |
Total Page | 400 |
বুদ্ধদেব বসু জন্ম ৩০ নভেম্বর ১৯০৮। কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, শিশু—সাহিত্যিক ও সমালোচক। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে তিনি শুধু কবিরূপেই বিশিষ্ট নন, আধুনিক কবিতার গতি নির্ধারণে এবং আধুনিক বাংলা কবিতাকে তার যথার্থ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় তাঁর দান অসামান্য। কাব্যগ্রন্থ : পৃথিবীর প্রতি (১৯৩৩), দময়ন্তী (রচনাকাল ১৯৩৫—৪২, প্রকাশ ১৯৪৩), কঙ্কাবতী (১৯৩৪), দ্রৌপদীর শাড়ি (১৯৪৮), শীতের প্রার্থনা: বসন্তের উত্তর (১৯৫৫), যে অঁাধার আলোর অধিক (১৯৫৮)। বাংলা কবিতার ইতিহাসে তাঁর একটি বিশিষ্ট ভূমিকা হলো কবিতা পত্রিকার সম্পাদনা। সমালোচনাতেও তাঁর স্থান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শাড়ী (১৯৩০), লাল মেঘ (১৯৩৪), কালো হাওয়া (১৯৪২), তিথিডোর (১৯৪৯) প্রভৃতি উপন্যাস; অসামান্য মেয়ে (১৯৩৪), ঘরেতে ভ্রমর এল (১৯৩৫), ভাসো আমার ভেলা (১৯৬৩) প্রভৃতি গল্পগ্রন্থ; আমি চঞ্চল হে (১৯৩৭), সব পেয়েছির দেশে (১৯৪১), উত্তর তিরিশ (১৯৪৫) তাঁর সুবিশাল গ্রন্থাবলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বাংলা নাটকেও তাঁর দান অসামান্য। তপস্বী ও তরঙ্গিণী (১৯৬৬), কালসন্ধ্যা (১৯৬৯), অনাম্নী অঙ্গনা ও প্রথম পার্থ (১৯৭০) প্রভৃতি নাটক তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনার অন্তর্গত। অনুবাদেও বুদ্ধদেবের অসামান্য কৃতিত্ব। তাঁর হাউই (অস্কার ওয়াইলডের গল্পের অনুবাদ, ১৯৪৪), কালিদাসের মেঘদূত (১৯৫৭), শার্ল—বোদলেয়ার: তাঁর কবিতা (১৯৬১)। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কিত সমালোচনায় তিনি একটি স্বতন্ত্র ধারার স্রষ্টা। ১৮ মার্চ ১৯৭৪ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।