দুই শতাব্দীর ঔপনিবেশিক ইংরেজ শাসনের অবসানের পর ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ১৯৪৭ সালে এলো ঠিকই, কিন্তু তার সঙ্গে অপ্রত্যাশিতভাবে যুক্ত হলো বিভাজনের বিষাদ ও অকারণ রক্তক্ষয়। মৌলানা আবুল কালাম আজাদের ভারত স্বাধীন হলো কেবলই আর দশটা স্মৃতিকথার মতো নয়—এটি ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্তর্লীন ঘটনাপ্রবাহ উন্মোচনের এক সাহসী নিদর্শন। দুর্লভ অজানা তথ্য এবং নির্মম অকথিত সত্যের যুগপৎ উপস্থিতি বইটিকে বিশিষ্ট করেছে। মহাত্মা গান্ধী, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, জওহরলাল নেহরু, সর্দার প্যাটেল, কংগ্রেস কিংবা মুসলিম লীগ নেতৃত্ব—কেউই এখানে আজাদের নির্ভীক সমালোচনার হাত থেকে রেহাই পাননি। দেশভাগের ট্র্যাজেডি, পাকিস্তানের জন্ম ও ব্যর্থতার বীজ, অসাম্প্রদায়িক ভারতের স্বপ্ন—নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আর নিবিড় প্রজ্ঞার আলোকে সব কিছুই বিশ্লেষণ করেছেন মৌলানা আজাদ। সহজবোধ্য অথচ গভীর ব্যাখ্যায় তিনি তুলে এনেছেন সাতচল্লিশ-উত্তর রাজনীতির অন্ধতা ও ক্ষমতাবিলাসের বিবরণ, একই সঙ্গে হাজির করেছেন অহিংসা ও অসাম্প্রদায়িকতার কতক মহত্তম উদাহরণ। ইতিহাসের বয়ান, রাজনীতির ভাষ্য ও ব্যক্তিগত সাক্ষ্যের অনন্য রসায়নে নির্মিত এ বই পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগায়—১৯৪৭-এর পর এই উপমহাদেশ কি আদৌ সঠিক পথের দিশা পেয়েছিল? ভারতের স্বাধীনতা ও দেশভাগের অজানা অধ্যায় বিষয়ে আগ্রহী পাঠকের জন্য এটি একটি অবশ্যপাঠ্য গ্রন্থ, অপরিহার্যও বটে।
Book Name : | ভারত স্বাধীন হলো । India Wins Freedom |
Authors : | মৌলানা আবুল কালাম আজাদ |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition August 2025 |
ISBN Number: | 978-984-99332-7-4 |
Total Page | 292 |
ভারতবর্ষের টানা প্রায় দুইশ বছরের রক্তাক্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের পর ঘটনাবহুল সর্বশেষ সাতটি বছরের প্রধান রাজনৈতিক চরিত্ররূপেই নয়, আরও অনেক কারণেও উপমহাদেশের অনন্য চরিত্র মৌলানা আবুল কালাম আজাদ (১৮৭৮-১৯৫৮)। তাঁর জন্ম পবিত্র মক্কায়। বেড়ে ওঠা ও লেখাপড়া কলকাতায় একান্তই ঘরোয়া পরিবেশে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনা না মাড়িয়েও তিনি আধুনিক ও প্রাচীন শিক্ষার শীর্ষস্থানীয় পণ্ডিতদের ওপর প্রাধান্য অর্জন করেছিলেন কেবল নিজের প্রখর প্রতিভাবলে। কি জ্ঞানবত্তায়, কি সাহিত্য ও সাংবাদিকতায়, কি রাজনীতি ও সংগঠনে সর্বত্রই তিনি একটি অদ্বিতীয় বিপ্লবী চরিত্র। মুসলিম সমাজের তিনি ‘ইমামুল হিন্দ’, হিন্দুপ্রধান ভারতীয় কংগ্রেসের তিনি বরেণ্য সভাপতি। ব্রিটিশ ভাইসরয় ও কূটনীতিকদের সাথে সংলাপে তিনি ছিলেন কংগ্রেসের একমাত্র প্রতিনিধি। তাঁর সম্পাদিত উর্দু সাপ্তাহিক আল হিলাল-এর জন্য তাঁকে বারবার কারাগারে যেতে হয়। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও নীতিনিষ্ঠায় ভারতবর্ষের অন্য কোনো নেতাই তাঁর সমকক্ষ ছিলেন না। জিন্নাহর পাকিস্তান দাবির সম্মুখে একে একে গান্ধী-নেহরু-প্যাটেল সকলেই নেতিয়ে পড়লেন, কিন্তু তখনও তিনি তাঁর অবদানে অটল ছিলেন। অবশেষে স্বাধীন ভারতে যখন তিনি চরম সাম্প্রদায়িক রাজনীতির রূপায়ণ দেখলেন, তখন তাঁর স্বপ্ন ভঙ্গ হলো। এ পুস্তকটি তাঁর সে মর্মবেদনার মূর্তরূপ। এটাকে তাঁর দায়মোচনের প্রচেষ্টাও বলা চলে। রাজনীতিক মৌলানা আজাদের মৃত্যু হলেও যুগস্রষ্টা লেখক ও চিন্তাবিদ বিপ্লবী আজাদ যুগ যুগ ধরে অমর হয়ে থাকবেন।