মানুষের সমাজে প্রথম যাদুকরেরা ছিলেন পুরোহিত, পূজারি, অবতার বা গুরুজাতীয় অসাধারণ ব্যক্তি। সাধারণের অনধিগত বিশেষ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সম্পূর্ণ লৌকিক উপায়েই এরা যেসব রহস্যময় ক্রিয়াকলাপের অনুষ্ঠান করতেন, সেসব কিছুই সাধারণ মানুষ ভীতি এবং শ্রদ্ধা-মেশানো বিস্ময়ের চোখে দেখে ভেবে নিত এরা অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন, ঐশ্বরিক যাদু-ক্ষমতার অংশীদার। এই যাদুকরদের যাদুপ্রদর্শনের উদ্দেশ্য ছিল মনোরঞ্জন বা চিত্তবিনোদন নয়, অলৌকিক রহস্যময় শক্তির অভিনয়ে অভিভূত এবং বশীভূত করে সাধারণ মানুষদের ওপর আধ্যাত্মিক বা অন্যপ্রকার প্রভাব বিস্তার করা। তারপর যাদুবিদ্যা ক্রমে ক্রমে অলৌকিকতার এলাকা ছাড়িয়ে চলে এসেছে লৌকিক মনোরঞ্জনের এলাকায়। যাদুবিদ্যার ইতিহাস এই ক্রমবিবর্তনেরই ইতিহাস।
মঞ্চে, মহলে বা ময়দানে বিচিত্র বিস্ময় আর রহস্য সৃষ্টি করাই যাদুকরদের পেশা বা নেশা, তাঁদের জীবনও তেমনি অসাধারণ বিস্ময়, রহস্য আর বৈচিত্র্যে ভরা। এরা নানা নামে অভিহিত—ম্যাজিশিয়ান, যাদুকর, বাজিকর, ভেলকিওলা, মাদারি। এঁদের তাক লাগানো খেলাগুলোরও নানা রকম নাম—ম্যাজিক, যাদু, ভেলকি, ভানুমতীর খেল, ভোজবাজি। যাদুর জগতে দীর্ঘদিন অন্তরঙ্গ বিচরণের ফলে যাদুকরদের বিচিত্র জীবনধারার সঙ্গে পরিচিত হয়ে লেখক এই গ্রন্থে শুনিয়েছেন এদেরই কিছু কিছু আশ্চর্য সত্যি কাহিনি, যা কাল্পনিক কাহিনি বা গল্পগাছার চাইতেও রোমাঞ্চকর।
.
.
একজন অখ্যাত যাদুকরের বিচিত্র কাহিনি মনে পড়ে গেল। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ। আমি তখন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে পড়ি। চাঁদ মিয়া নামে একজন যাদুকর স্কুলের বড় হলে আমাদের যাদুর খেলা দেখালেন। বেশি খেলার পুঁজি ছিল না ভদ্রলোকের, ঘণ্টাখানেক খেলা দেখিয়েছিলেন তিনি। এখনকার চোখে তাঁর খেলা কেমন লাগত জানি না, তখন মন্দ লাগেনি। হাওয়া থেকে একটি-একটি করে টাকা ধরে তাঁকে একটি টিনের কৌটো ভরে ফেলতে দেখে আমরা সবাই বেশ বিস্মিত হয়েছিলাম; ভাবছিলাম এভাবে হাওয়া থেকে খুশিমতো টাকা ধরবার বিদ্যেটা জানা থাকলে কী ভালোই না হতো! তাহলে আর টাকার জন্য কোনো ভাবনা থাকত না।
Book Name : | যাদু-কাহিনী |
Authors : | অজিত কৃষ্ণ বসু |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition July 2025 |
ISBN Number: | 978-984-99332-2-9 |
Total Page | 240 |
জন্ম ৩ জুলাই ১৯১২। পৈতৃক নিবাস ঢাকার গেন্ডারিয়ায়। জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ, পরে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ইংরেজি ভাষা-সাহিত্যে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। প্রথম জীবনে ডি জে কিমার কোম্পানির বিজ্ঞাপন বিভাগের কপিরাইটার ও ডাকব্যাক কোম্পানির প্রচার কর্মকর্তা ছিলেন। পরে গোবরডাঙা ও আশুতোষ কলেজে ইংরেজি বিষয়ে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯২৬ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে ‘খোকাখুকু’ মাসিকপত্রে প্রকাশিত অনুবাদ-কবিতা দিয়ে লেখালেখির সূত্রপাত। কৌতুকরসের কবিতা-গল্প-উপন্যাসই লিখেছেন বেশি। শনিবারের চিঠিতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত ‘পাগলা গারদের কবিতা’ তাঁর অন্যতম সেরা রচনা। ইংরেজিতে হাসির কবিতা লিখেছেন শঙ্করস উইকলিতে। মার্ক টোয়েনের টম সয়্যার ও হাকলবেরি ফিনসহ একাধিক বিদেশি উপন্যাস অনুবাদ করেছেন। জাদুসম্রাট পিসি সরকারের বাল্যবন্ধু অজিত কৃষ্ণ জাদুবিদ্যা নিয়ে একাধিক বই লিখেছেন। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি তিনি সংগীতসাধনা ও গান রচনাতেও সক্রিয় ছিলেন। সংগীতে হাতেখড়ি আট বছর বয়সে, মান্না দের পিতৃব্য কৃষ্ণচন্দ্র দে ওরফে ‘কানা কেষ্ট’র কাছে। ওস্তাদ গুল মহম্মদ খাঁ ও তারাপদ চক্রবর্তীর কাছেও তালিম নিয়েছেন। ‘অ. কৃ. ব.’ তাঁর ছদ্মনাম। মৃত্যু : ৭ মে ১৯৯৩, কলকাতায়।