জহর সেনমজুমদার তাঁর কবিতায় পাঠকের বোধকে জাগিয়ে তোলেন কল্পনাতীতভাবে, স্বপ্ন¯্রষ্টা ও স্বপ্নদ্রষ্টা এই কবি পাঠকের মনোরঞ্জনের দিকে তাকিয়ে কবিতা লেখেন না। কেবলই চিত্রকল্পের পর চিত্রকল্প, স্পন্দনের পর স্পন্দন, ইশারার পর ইশারা দিয়ে চলেন তাঁর কবিতায়; কোথাও পেঁৗছানো যেন প্রাসঙ্গিক নয় একেবারেই। তাঁর কবিতার মধ্যে নিহিত আছে এক মহান বিনষ্টির বোধ, মূলগতভাবে আশাবাদী বটে কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে কবি নিজে হয়ত বিয়োগান্ত। পাঠ করতে করতে পাঠক এক ঘোরগ্রস্থ ম্যাডনেসের ভিতর থেকে নিজেকে আবিষ্কার করবেন হারানো অখণ্ড বাংলার বর্তমান ভাঙা রূপের ক্ষয়িষ্ণু উর্বর কৃষিক্ষেতে।
Book Name : | পিঁপড়ে আর পাঁজরের কবিতা |
Authors : | জহর সেনমজুমদার |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition, February 2018 |
ISBN Number: | 978-984-93396-5-6 |
Total Page | 96 |
জহর সেনমজুমদার ১৯৬০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া থানার অন্তর্গত আড়বালিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন; তাঁর পূর্বপুরুষের বাসভূমি ছিল বরিশালের শোলক গ্রামে; ফলত তাঁর অন্তর্গত চেতনা ও মনোবীজে বাদুড়িয়া ও বরিশাল একই সঙ্গে ক্রিয়াশীল; ইসকুলের পড়াশোনা শেষ হতে না হতেই ১৯৭৬ সালে তিনি গ্রাম থেকে শহরে চলে আসেন; শুরু হয় যন্ত্রযুগের যন্ত্রণা; অভ্যন্তরীণ ক্ষরণ, রক্তপাত ও আত্মদংশনের হাহাকার তিনি সর্বদাই বহন করেছেন—কিন্তু কাউকে কখনো তা বুঝতে দেননি; গ্রাম ও শহরের ঘূর্ণাবর্তে তৃষিত হরিণের মতো ক্রমাগত দৌড়তে দৌড়তে তিনি জল—স্থল—অন্তরীক্ষে একজন সমপ্রাণ সখা খুঁজেছেন, একজন সমীকৃত জীবনদেবতা খুঁজেছেন, একজন শঙ্খিণী জগজ্জননী খুঁজেছেন; এই চলমান অন্বেষণ—প্রক্রিয়ার মধ্যেই ক্রমশ তিনি আশুতোষ কলেজ থেকে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠক্রিয়া সমাপ্ত করে শেষাবধি অধ্যাপনাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। প্রাবন্ধিক হিসাবে দু—বাংলাতেই তিনি যেমন সমাদৃত, তেমনই আশি দশকের বহুরৈখিক স্বর ও অন্তর্গত চেতনাবীজের কবি হিসাবে ক্রমশই তিনি আমাদের ভৌগোলিক ভূমি ও ভাষায় অবিনাশী বীজ ও শিকড় সংস্থাপনে অগ্রণী হয়ে উঠেছেন; ভাষায়, ভাবনায়, চেতনায় তিনি জীবনানন্দ পরবর্তী সময়ের এক নতুন কারিগর। বীজ ও শিকড়সন্ধানের এই কবি—আসলে যেন কবি নয়, ভূমি ও ভাষার প্রত্নতাত্ত্বিক।