আগুনের পরশমাণিকের ছোঁয়ায় অগ্নিবীণা বাজাতেন তিনি। শোষণ-বঞ্চনার প্রতিবাদে দ্রোহ করেছেন বারংবার। এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতূর্য নিয়ে স্বদেশবাসীর ঘুম ভাঙাতে গান গেয়েছেন। বিদ্রোহী রণক্লান্ত, কাজী নজরুল ইসলাম। যার জীবন ৭৭ বছরের হলেও সৃষ্টিশীল ছিল মাত্র ২৩ বছর। কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন আপন সৃষ্টির চেয়েও মহত্তর হয়ে, আপন বিশিষ্টতায় সমুজ্জ্বল, একক, অনন্য এক নায়ক হয়ে। বাংলা-বাঙালিকে সমকালে ভাষার দীপ্রতায়, ভাবের ও আবেগের বিশিষ্টতায় এভাবে আলোড়িত, অভিভূত আর কোনো কবি আজও করেননি। বাংলার মাটি-মানুষের গভীর নৈকট্যে স্থিত নজরুলকে বাঙালি, বাংলাদেশ অনিরুদ্ধ প্রবল উচ্ছ্বাসে গ্রহণ করেছে, বরণ করেছে মমত্বের, শ্রদ্ধার সৌন্দর্যে। আপন যৌবনের, জাগরণের কবি হিসেবে।
বাংলা সাহিত্যে-বিদ্রোহে-সৃষ্টিতে অনন্য স্বতন্ত্র সংকলন ‘সঞ্চিতা’। বিশ্ব-বিধাত্রীর চিরবিস্ময় সাম্যবাদী কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্বনির্বাচিত কবিতা-গানে। ১৯২৮ সালে ‘সঞ্চিতা’র আবির্ভাব বর্মন পাবলিশিং হাউস থেকে, ২ অক্টোবর। আত্মপ্রকাশের মাত্র ১২ দিন পরেই পুনরাবির্ভাব ডি.এম. লাইব্রেরির নৈবেদ্যে। দুটি সংস্করণই উৎসর্গিত বিশ্বকবিসম্রাট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। আদৃত-মান্য-আলোচিত নজরুল সৃষ্টি-বিশ্বের প্রতিনিধিত্বমূলক এ কাব্য-সংকলনটির প্রামাণ্য নবম সংস্করণের পাঠ অনুসৃত হয়েছে বর্তমান প্রকাশে।
তিমির রাত্রি-ভারি তুফান পাড়ি দিয়ে আজও ‘সঞ্চিতা’ আর নজরুল আহ্বান জানান বিশ্বের-বাংলার নওজোয়ানদের। মহাশ্মশান সজীব করতে।
Book Name : | সঞ্চিতা |
Authors : | কাজী নজরুল ইসলাম |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition, May 2024 |
ISBN Number: | 978-984-98111-6-9 |
Total Page | 213 |
স্বাধীনতা, মানবতা, প্রেম ও বিপ্লব ছিল তাঁর অনন্য সাধারণ সাহিত্যের মূল সুর। লেখক হিসেবে ছিলেন মৌলবাদ, বর্ণবাদ, লিঙ্গবিদ্বেষ ও ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটি সংগ্রামে, আন্দোলনে, বিশেষত মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় কবি। কাজী নজরুল ইসলাম। জন্ম ১৮৯৯ সালের ২৪ মে, পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়ায়। বাংলা সাহিত্যের চিরবিদ্রোহী কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও নজরুল ছিলেন একাধারে সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, রাজনীতিবিদ, গায়ক ও অভিনেতা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ৪৯ নম্বর বাঙালি পল্টনের সৃষ্টিশীল সৈনিক নজরুল ‘লাঙল’, ‘নবযুগ’ ও ‘ধূমকেতু’র মতো সংবাদপত্রও সম্পাদনা করেছেন। কবিতার জন্য গিয়েছেন সাম্রাজ্যবাদীর কারাগারে। আদর্শের বলে লড়েছেন নির্বাচনে। অসংখ্য বিচিত্র রাগ-রাগিণীর স্রষ্টা সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে রচেছেন তিন হাজারের বেশি গান। দেশাত্মবোধক গান, শ্যামাসংগীত, গজলে তাঁর জুড়ি বাংলায় আজও নেই। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সম্মানসূচক ডি.লিট’, ভারতে ‘পদ্মভূষণ’, বাংলাদেশে ‘একুশে পদক’ ও ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’-এ ভূষিত হন তিনি। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয় চিরবিদ্রোহী কবিকে।