১৯৩৭। কলকাতা। খ্যাতির মধ্যগগনে বাঙালির সুরের নবীন দিশারি, বিদ্রোহের প্রথম পুরুষ। ছেড়ে আসা নার্গিসকে আত্মপক্ষ সমর্থন করে লিখেছিলেন—‘আমার চক্রবাক নামক কবিতা- পুস্তকের কবিতাগুলো পড়েছ? তোমার বহু অভিযোগের উত্তর পাবে তাতে।’ প্রেমিক নজরুল, বিরহী নজরুলের বিখ্যাত-জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ চক্রবাক-এর প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯২৯ সালের আগস্টে। প্রকাশক গোপালদাস মজুমদারের ডি.এম. লাইব্রেরি। সুরেন্দ্রনাথ মৈত্রকে উৎসর্গ করে।
নজরুল হৃদয়ের কবি, প্রেমের সহচর। সাড়া দিতেন হৃদয়ের ডাকে। জীবনে প্রচুর উত্থান- পতন। বহু প্রেম। সেই প্রেম ঘিরে অসংখ্য গান, কবিতা। দরদী-বেদনার অন্ধকারে, প্রেমের ধ্যানে এবং অতীতের সুখদ স্মৃতিচারণার রহস্যময় আত্মপ্রত্যয়ে বিরাট-প্রাণ কবি কাজী নজরুল ইসলামের দেখা মেলে চক্রবাক-এ। প্রেমের চেতনা আর প্রকৃতি-অনুধ্যানের শিল্পিত উপস্থাপনে। তাঁর রোমান্টিক মানসজাত রহস্যবোধ ও বেদনার গৌরবে নন্দিত প্রেমকাতর বিরহী প্রেমিকের আর্তকান্না যেন পথহারা পাখি হয়ে কেঁদে ফেরে। কুলি থেকে কেরানি, সকল বাঙালির প্রেমপিয়াসী মানস চক্রবাক-এ পায় না-বলা সকল কথার সন্ধান, মন হারানোর সকল ব্যথার সান্ত্বনা। প্রেমেই জাগ্রত হয় মানুষের মাঝে শুভবোধ-করুণা-মমত্ব। চক্রবাক সে-ই সাক্ষ্য দেয়।
Book Name : | চক্রবাক |
Authors : | কাজী নজরুল ইসলাম |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition August 2025 |
ISBN Number: | 978-984-99332-9-8 |
Total Page | 64 |
স্বাধীনতা, মানবতা, প্রেম ও বিপ্লব ছিল তাঁর অনন্য সাধারণ সাহিত্যের মূল সুর। লেখক হিসেবে ছিলেন মৌলবাদ, বর্ণবাদ, লিঙ্গবিদ্বেষ ও ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটি সংগ্রামে, আন্দোলনে, বিশেষত মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় কবি। কাজী নজরুল ইসলাম। জন্ম ১৮৯৯ সালের ২৪ মে, পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়ায়। বাংলা সাহিত্যের চিরবিদ্রোহী কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও নজরুল ছিলেন একাধারে সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, রাজনীতিবিদ, গায়ক ও অভিনেতা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ৪৯ নম্বর বাঙালি পল্টনের সৃষ্টিশীল সৈনিক নজরুল ‘লাঙল’, ‘নবযুগ’ ও ‘ধূমকেতু’র মতো সংবাদপত্রও সম্পাদনা করেছেন। কবিতার জন্য গিয়েছেন সাম্রাজ্যবাদীর কারাগারে। আদর্শের বলে লড়েছেন নির্বাচনে। অসংখ্য বিচিত্র রাগ-রাগিণীর স্রষ্টা সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে রচেছেন তিন হাজারের বেশি গান। দেশাত্মবোধক গান, শ্যামাসংগীত, গজলে তাঁর জুড়ি বাংলায় আজও নেই। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সম্মানসূচক ডি.লিট’, ভারতে ‘পদ্মভূষণ’, বাংলাদেশে ‘একুশে পদক’ ও ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’-এ ভূষিত হন তিনি। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয় চিরবিদ্রোহী কবিকে।