১৯২৪ সালের আগস্ট মাসে প্রকাশ পেয়ে অক্টোবরে নিষিদ্ধ হয়, বিষের বাঁশী। নামপৃষ্ঠায় মুদ্রণসংখ্যা উল্লেখ ছিল ২২০০। সমস্ত শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ পুলিশ, বিষের বাঁশী বাজেয়াপ্তে। প্রকাশক-গ্রন্থকার কাজী নজরুল ইসলামের জোটে ছয় মাসের কারাদণ্ড। সমাজসেবী- সাহিত্যিক মিসেস এম. রহমানকে উৎসর্গিত বিষের বাঁশীর প্রচ্ছদ কবির ঝড়ের রাতের বন্ধু, ‘কল্লোল’-সম্পাদক দীনেশরঞ্জন দাশের। গ্রন্থালোচনায় প্রবাসী লেখে, ‘কবিতাগুলি যেন আগ্নেয়গিরি, প্লাবন ও ঝড়ে রুদ্ররূপ ধরিয়া বিদ্রোহী কবির মর্মজ্বালা প্রকটিত করিয়াছে।’
নজরুলের অগ্নি-বীণা ও বিষের বাঁশী নামে ভিন্ন হলেও অভিন্ন উৎস নিঃসৃত-নিক্ষিপ্ত অগ্নিশর। শিল্পের নন্দিত ভুবনে, রাজনৈতিক অঙ্গনে। সাম্যবাদী কবি জবানবন্দি দিয়েছেন, “‘অগ্নি-বীণা দ্বিতীয় খণ্ড নাম দিয়ে তাতে যে সব কবিতা ও গান দেবো বলে এতকাল ধরে বিজ্ঞাপন দিচ্ছিলাম, সেইসব কবিতা ও গান দিয়ে এই ‘বিষের বাঁশী’ প্রকাশ করলাম।” পরাধীন জাতিকে নবীন চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে, দেশের-দশের শুভে অগ্রগামী হতে ডাক দিয়েছেন, ‘অত্যাচারী সে দুঃশাসন, চাই খুন তার চাই শাসন’। নিষিদ্ধের শতবর্ষ পেরিয়ে তাই আজও প্রবল আদৃত-আলোচিত, প্রভাবসঞ্চারী বিদ্রোহীর বিষের বাঁশী।
Book Name : | বিষের বাঁশী |
Authors : | কাজী নজরুল ইসলাম |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition September 2025 |
ISBN Number: | 978-984-29140-2-7 |
Total Page | 68 |
স্বাধীনতা, মানবতা, প্রেম ও বিপ্লব ছিল তাঁর অনন্য সাধারণ সাহিত্যের মূল সুর। লেখক হিসেবে ছিলেন মৌলবাদ, বর্ণবাদ, লিঙ্গবিদ্বেষ ও ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটি সংগ্রামে, আন্দোলনে, বিশেষত মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় কবি। কাজী নজরুল ইসলাম। জন্ম ১৮৯৯ সালের ২৪ মে, পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়ায়। বাংলা সাহিত্যের চিরবিদ্রোহী কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও নজরুল ছিলেন একাধারে সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, রাজনীতিবিদ, গায়ক ও অভিনেতা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ৪৯ নম্বর বাঙালি পল্টনের সৃষ্টিশীল সৈনিক নজরুল ‘লাঙল’, ‘নবযুগ’ ও ‘ধূমকেতু’র মতো সংবাদপত্রও সম্পাদনা করেছেন। কবিতার জন্য গিয়েছেন সাম্রাজ্যবাদীর কারাগারে। আদর্শের বলে লড়েছেন নির্বাচনে। অসংখ্য বিচিত্র রাগ-রাগিণীর স্রষ্টা সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে রচেছেন তিন হাজারের বেশি গান। দেশাত্মবোধক গান, শ্যামাসংগীত, গজলে তাঁর জুড়ি বাংলায় আজও নেই। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সম্মানসূচক ডি.লিট’, ভারতে ‘পদ্মভূষণ’, বাংলাদেশে ‘একুশে পদক’ ও ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’-এ ভূষিত হন তিনি। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয় চিরবিদ্রোহী কবিকে।