প্রথাসিদ্ধ আধুনিকতার দোহাই তুলে শিল্পে সাহিত্যে ফলিত নিঃসঙ্গতাবোধের যে বিপুল আয়োজন (বলা বাহুল্য নিঃসঙ্গতাবোধ সত্যিকারের শিল্পীর পক্ষে একান্তই স্বাভাবিক। সেটি সন্দেহ নেই, শিল্পীর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই প্রতিফলিত হতে বাধ্য, কেবলমাত্র তাঁর চমকপ্রদ শিল্পকীর্তিতে নয়, নয় বিশেষ বিশেষ ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজন মাফিক হিসেব করা, মানসিকতার যে অবস্থানকে দীর্ঘকাল আগেই কাপুরুষতা বলে চিহ্নিত করা গিয়েছিল, এবং সেই নিঃসঙ্গতা, সত্যিকারের নিঃসঙ্গতা—বোধ সম্ভবত অতিমাত্রায় বিরল ঘটনা। কারণ সচেতনতা এবং প্রচণ্ড ব্যক্তিত্বের প্রয়োজনেই সেখানে নির্মম, ঠিক যে স্থানটিতে লেখকের শিল্পীর মানবিক সংগ্রামের ভয়ঙ্কর আরম্ভ—) অন্তরঙ্গতার সুরটি ছিঁড়ে খঁুড়ে একাকার করে দেয়, তার বিরুদ্ধে অত্যন্ত স্বাভাবিক জিব্রানের নিঃসঙ্গ কথোপকথন। এই নির্জন কবির একান্ত কথোপকথন বিংশ শতাব্দীর প্লাস্টিক শহরের মানুষজন আমাদের চঞ্চল করে দেয় যেমন দেয় বন্ধ্যা নারীকে—ধূলিমুঠি কাপড়ের গল্প। সমস্ত প্রতিকূল প্রতিবেশের মধ্যেও কবির প্রাণপণ উত্তরণের প্রয়াস। সেই প্রয়াসকে যতই ইউটোপিয়ান কিংবা মেঠো বলে অস্বীকার করার চেষ্টাই করা হোক না কেন বুকের গভীরে অদৃশ্য কিলকের স্থাপন সেখানে সংঘটিত হয়েই যেতে থাকে। সম্ভবত সেখানেই কবির কৃতিত্ব, তাঁর সংগ্রামের সার্বিক চিহ্ন, হয়ত বা পুরস্কারের নয়। জিব্রানের জগত সেই অন্তরঙ্গতার জগত, যে জগতের সৃষ্টি—কল্পনায় কবির শরীরের প্রতিটি অণুপরমাণুও নিয়োজিত, মানস অবস্থানও। এবং তাই তাঁর ব্যক্তিত্ব মিথ্যার পৃথিবীকে একবার হলেও চমকিয়ে দেয়।
Book Name : | কহলীল জিব্রানের শ্রেষ্ঠ কবিতা |
Authors : | কহলীল জিব্রান |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 2nd Edition, February 2019 |
ISBN Number: | 978-984-91027-6-2 |
Total Page | 128 |
লেবাননের বেকখরিতে ১৮৮৩ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন জিব্রান—কহলীল জিব্রান। যখন তাঁর বয়স চার বছর, তখন তিনি তাঁর মা এবং দাদার সঙ্গে আমেরিকার বোস্টনে চলে আসেন। ছেলেবেলা থেকেই নিরন্তর দুঃখের জীবন তাঁর শুরু হয়ে যায়। দশ বছর বয়সেই একে একে দাদা মা এবং ছোট বোন সুলতানা যক্ষ্মা রোগে মারা যান এবং বিদেশে জিব্রান এক অসম্ভব শূন্যতা এবং নিঃসঙ্গতার মধ্যে নিক্ষিপ্ত হন। ভাই বোনের মধ্যে একমাত্র বড় বোন মেরিয়ানই তখন বেঁচে আছেন এবং রাত্রিদিন সেলাই—এর কাজ করে সংসার প্রতিপালন করার চেষ্টা করছেন। জিব্রান তখনও কৈশোরের গণ্ডি পার হননি। দারিদ্র্য এবং দুঃখকষ্ট থাকলেও দিন কাটে। শিশু কিশোর হয়, কিশোর যুবক। জিব্রান ছবি অঁাকার কাজ করতে শুরু করেন, সঙ্গে এদিক—ওদিকের কিছু লেখাপড়ার কাজকর্ম। এবং যেমন হয়ে থাকে সাধারণ নতুন শিল্পীর রোজগার হয় নামমাত্র। ভয়ংকর দারিদ্র্য ভাই বোনের দুঃখের সংসারকে ক্রমাগত আহত করতে থাকে। তবু সেই অসম্ভব নিদারুণ পরিস্থিতিতেও লেখা ছাড়তে পারেন না জিব্রান। অর্ধাহারে, প্রচণ্ড শীতের মধ্যে রাত্রি জেগে পাগলের মতন লিখে চলেন অবিশ্রাম, ছবি অঁাকেন। ১৯০৮ সাল থেকে ১৯১০ সালের মধ্যে “The Procession” শেষ হয়। অতঃপর তিনি ভাগ্যান্বেষণে মহত্তর শিল্পকীর্তির পীঠস্থান প্যারিসে চলে আসেন। প্যারিসে থাকেন বছর দুই। কিন্তু কাজকর্মের ব্যাপারে সম্পূর্ণ বিফল হওয়ার ফলে আবার তাঁকে বোস্টনে ফিরে যেতে হয় ১৯২২ সালে। এই সময় থেকেই অবশ্য তাঁর বই ক্রমাগত প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯১৯ “The Mad Man” ১৯২০ সালে “The fore runner” ১৯২৩ সালে “The Prophet” এবং “Son of Man” প্রকাশিত হয়ে যথেষ্ট সমাদর লাভ করতে থাকে। অতঃপর মাত্র ৪৮ বছর বয়সে জিব্রান পরলোক গমন করেন ১৯৩১ সালে। আমেরিকা থেকে তাঁর মরদেহ লেবাননে নিয়ে যাওয়া হয়। সমাধিস্থ করা হয় যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় সম্মানের সঙ্গে। লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লক্ষ লক্ষ লোক কবির মরদেহকে শেষবারের মতোন শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেছিল।