শহীদ কাদরী সর্বতোভাবে একজন খাঁটি কবি। তার কবিতায় মূর্ত হয়ে ওঠে শহুরে মানুষ, নাগরিক মানসের প্রতিচ্ছবি, তাদের সমস্যা—জর্জরিত জীবন, ভাবাবেগ, আতঙ্ক, অনিশ্চয়তাবোধ, ক্রোধ, হিংসা, হতাশা কখনো বহিরাশ্রয়ী প্রতীকের গভীরতায় কখনো তীক্ষè উপমায় রূপকল্পে। বিংশ শতাব্দীর রুদ্ধশ্বাস নাগরিক জীবনের নাটকীয় স্পন্দনময়তাকে শহীদ কাদরী তার কবিতায় সর্বাঙ্গে বিস্ময়ের নিপুণতার সঙ্গে সংহত করে তোলেন। তার প্রতিটি কবিতাই বুদ্ধিদীপ্ত ও ঝকঝকে। তার ভাষা অত্যন্ত ঋজু সংকেতময় এবং তীব্র গতিসম্পন্ন। ত্রিশোত্তর বাংলা কবিতার নিরক্ত ধমনীতে শহীদ কাদরী নতুন রক্তোচ্ছ্বাস এনে দিয়েছেন। স্বোপার্জিত মুদ্রা অঙ্কিত করেছেন তার কাব্য প্রতিমায়।
—বেলাল চৌধুরী
খুব বেশি কবিতা লেখেননি শহীদ কাদরী, যদিও আবাল্য তিনি কবিতা রচনায় লিপ্ত। যেকোনো শিল্পীর অন্তর্গত প্রস্তুতি চলে সবসময়ই; সেই অর্থে নিশ্চয় শহীদ কাদরীও অবিচ্ছিন্ন শক্তিচর্চায় নিরত। প্রথম গ্রন্থ প্রকাশের আগেই কবি হিসেবে শহীদ কাদরী প্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিলেন। গ্রন্থকার হিসেবে উপস্থিত হয়ে কাদরী ক্রমাগত নিজের আবৃত্তি—পুনরাবৃত্তি করেননি, ক্রমাগত এগিয়েছেন, আবার মৌল—আমি অটুট থেকেছে। এইভাবে এক স্থির অস্থিরতায় তিনি হয়ে উঠেছেন এদেশের কয়েকজন প্রধান কবির অন্যতম।
শহীদ কাদরী যে—জীবনের জয়মিনার উত্থিত করে ধরেছেন, তা টিয়েপাখির পালক আর গোলাপের পাপড়ি দিয়ে তৈরি এক নিশানের মতো, তা নির্বোধ নিরনুভব চিৎকারে পর্যবাসন মানেননি, তিনি ধুলোমাটির পণ্ডু সংসারের অভিজ্ঞতা থেকেই তা তুলে ধরেছেন। এ জন্যই তা স্বাভাবিক, সুন্দরের জলে স্নাত সত্যের মূর্তির মতো প্রতিভাত হয়।
—আবদুল মান্নান সৈয়দ
Book Name : | প্রেমের কবিতা সমগ্র । শহীদ কাদরী |
Authors : | শহীদ কাদরী |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition, February 2020 |
ISBN Number: | 9789849489740 |
Total Page | 112 |
১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকায় শহীদ কাদরীর জন্ম। ১৯৪৬—এর দাঙ্গা ও ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের পর শহীদ কাদরীদের পরিবারটি পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে পূর্ববঙ্গে আসার উদ্যোগী হলেও দেশ ছাড়ে ১৯৫২ সালে। তাঁর বাবা খালেদ ইবনে আহমেদ কাদরী সেই সময়ের ‘জুটবোর্ড’—এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৫০ সালে শহীদ কাদরীর বাবার মৃত্যু হলে নানা টানাপোড়েন শেষে শহীদ কাদরীর মা মাহমুদা কাদরী তিন সন্তান নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। অন্য দুই সন্তান হলেন শাহেদ কাদরী, নাফিজা কাদরী। এরপর প্রায় তিন দশক শহীদ কাদরী ঢাকা শহরে অবস্থান করেন। ১৯৭৮ সাল থেকে তাঁর প্রবাস জীবন শুরু হয়। তিনি বার্লিন, লন্ডন, বোস্টন এবং মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত নিউইয়র্কে বসবাস করেছেন। বিচিত্র পেশায় সংশ্লিষ্ট হলেও কোথাও বেশি দিন থিতু থাকেননি। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে শহীদ কাদরী প্রথম কবিতা ছাপা হয় বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত কবিতা পত্রিকায়। তার দীর্ঘ কাব্যজীবনে প্রকাশিত কাব্যের সংখ্যা ৪টি। পঁচিশ বছর বয়সে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্য উত্তরাধিকার (১৯৬৭)। এরপর ১৯৭৪ সালে তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা, কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই এবং প্রবাসে থাকাকালীন বেরোয় আমার চুম্বনগুলো পেঁৗছে দাও (২০০৯)। এই চারটি গ্রন্থে সন্নিবেশিত কবিতার সংখ্যা ১২২টি। পরবর্তীতে তিনি আরও চারটি কবিতা লেখেন। বাংলা কবিতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য শহীদ কাদরী বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৩), একুশে পদক (২০১১) লাভ করেন। শহীদ কাদরী ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।