শুভ্র বরফের দেশ জাপানের নোবেল বিজয়ী ঔপন্যাসিক ইয়াসুনারি কাওয়াবাতার সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস। উপন্যাসটিতে টোকিওর একজন ধনী ব্যক্তির উত্তর জাপানের তুষার—ঢাকা এলাকার একটি উষ্ণ ঝরনায় ভ্রমণে এসে দুই মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে ত্রিভূজ প্রেমকাহিনি রচনা করার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। শীমামুরা বিবাহিত, সুনির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। তবে টাকা—পয়সার অভাব নেই, কারণ উত্তরাধিকার সূত্রে অনেক সম্পত্তির মালিক হয়েছে সে। শীমামুরা যে ঝরনার এলাকায় বেড়াতে যায়, সেখানে হোটেলে কোমাকো নামের বাইজি বা গেঈসার সঙ্গে তার পরিচয়। শীমামুরার দৃষ্টি কামুক হলেও, কোমাকো তাকে প্রকৃতই ভালোবেসে ফেলে। তার প্রতি টান থেকে শীমামুরা পরেও ঐ উষ্ণ ঝরনার এলাকায় যায়। যাবার পথে ট্রেনে ইয়োকো নামের মেয়ের সঙ্গে প্রথম দেখা। শীমামুরা ইয়োকোর মধুর কণ্ঠস্বরে আকৃষ্ট হয়, এদিকে ইয়োকোও কোমাকোকে ঈর্ষা করা শুরু করে। শুভ্র, সুন্দর বরফের দেশের উষ্ণ ঝরনার প্রেক্ষাপটে রচিত এ উপন্যাসের মাধ্যমে ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা উত্তরের দেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা, বিশেষ করে বাইজিদের সংগ্রামমুখর জীবনের কথা তুলে ধরেছেন। উত্তরের ভূদৃশ্য একই সঙ্গে মনোরম এবং নির্জন। কোমাকো নামের মেয়েটা ভালো, কিন্তু তার জীবন নিষ্ফল। ইয়োকোর কণ্ঠ সুন্দর কিন্তু বিষাদমাখা। সুন্দর যেন সবসময় বিষাদময়।
Book Name : | শুভ্র বরফের দেশ |
Authors : | ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition, February 2023 |
ISBN Number: | 978-984-97227-3-1 |
Total Page | 128 |
ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা (১৮৯৯—১৯৭২) জাপানের প্রথম এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরে এশিয়ার দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরুস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে তিনি স্বচক্ষে দেখেছিলেন এবং তাঁর লেখনীতে বিশ^কবির প্রভাব স্পষ্ট। শৈশবেই পিতা—মাতা এবং বোনসহ প্রায় সব আপনজনকে হারান এবং সম্ভবত সে কারণেই তাঁর লেখনীর মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতাবোধ স্পষ্ট। অসম্ভব ক্ষুরধার অনুভূতি ছিল তাঁর, চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনা উপলব্ধি করেছেন হৃদয় দিয়ে, অনুভব করেছেন শুধুমাত্র হৃদয়ঘন সম্পর্কই দিতে পারে সুখের ঠিকানা, কিন্তু এমনকি চরম সুখ প্রাপ্তির মুহূর্তেও হানা দেয় সেই সুখ হারিয়ে যাবার বিষাদমাখা চিন্তা, সুখ যেন মৃত্যুরই অশনী সংকেত। সৌন্দর্য এবং বিষাদ যেন মুদ্রার এপিঠ—ওপিঠ। টোকিও বিশ^বিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য অধ্যয়নের মাধ্যমে পশ্চিমা সাহিত্য—সংস্কৃতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করেছিলেন, পশ্চিমা সাহিত্য—তত্ত্ব দ্বারা প্রভাবিতও হয়েছিলেন এবং সেই অনুযায়ী সাহিত্য অনুশীলনও শুরু করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ঐতিহ্য—সমৃদ্ধ জাপানি সাহিত্যের দিকে ঝঁুকেছিলেন, বিশেষ করে বহুল খ্যাত হাইকু কবিতার রং ও ঢং তাঁর মজ্জাগত ছিল। যদিও লিখেছেন উপন্যাস, কিন্তু বিষয়—নির্বাচনে, উপমায় এবং ভাষায় তাঁর একেকটা উপন্যাস যেন একেকটা গীতিকবিতা, সেগুলো যেন হাইকুর স্পিরিটে চোলাই করা। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের আগে ও পরে প্রায় চার দশক ধরে লিখেছেন তিনি, যার মধ্যে রয়েছে অনেকগুলো উপন্যাস এবং ছোটগল্প। তবে দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধ অথবা জাপানের সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয়সমূহ তাঁর লেখার প্রতিপাদ্য হয়ে ওঠেনি। বরং তিনি তুলে ধরেছেন পাহাড়—সমুদ্রবেষ্টিত এবং বরফ ও মেঘমাখা জাপানের নান্দনিক নৈসর্গিক দৃশ্য। মনোরম ভূদৃশ্যের অঁাচল ঘিরে রয়েছে সুন্দর মনের মানুষ। তাদের মধ্যে প্রেম আছে, দ্বন্দ্ব আছে, আছে দুঃখ. বেদনা, কষ্ট। তবুও কোনো চরিত্রই যেন সেই অর্থে ‘ক্রিমিনাল’ না। পশ্চিমা প্রভাবে ক্রমাগত আধুনিক হয়ে ওঠা জাপানে ঐতিহ্যের উপস্থিতি কতটুকু সেটা তার লেখনীতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।