‘যা—ই লিপিবদ্ধ করি... তা—ই আক্ষরিক অর্থে সুনির্দিষ্ট কর্তব্যেও ভারপ্রাপ্ত দেবী অথবা দেবতা হয়ে তৎক্ষণাৎ জন্মলাভ করে...’ একদা লিখেছিলেন তিনি, বিনয় মজুমদার, সেই কবে, মধ্য ষাটে, তাঁর অধিকন্তু’—র পাতায়। তার আগে—পরে বাংলা কবিতা এই কবির হাতে ফিরে ফিরে নবজন্ম পেয়েছে, ‘নক্ষত্রের আলোয়’, ‘গায়ত্রীকে’ থেকে শুরু করে ‘ফিরে এসো, চাকা’, ‘অঘ্রাণের অনুভূতিমালা’ হয়ে একের পর এক কাব্যগ্রন্থে। ছন্দের নিজস্ব বর্ণমালায় নিস্পৃহভাবে সুরযোজনা করতে করতে বিনয় ডুবে গেছেন দৃশ্যের অতীত সেই অদৃশ্যেরও অতল গহ্বরে, যেখানে পা—রাখার অভিজ্ঞতা থেকেই একমাত্র টের পাওয়া যায় স্বরলিপির চকিত উদ্ভাসে স্বর ও সুরের একাকার হয়ে যাওয়া। সাম্প্রতিক বাংলা কবিতা যে এই কবির উপলব্ধিতে তার যৎযাবতীয় মৃদুতার হাত ছাড়িয়ে নীলাভতম নীলে বিলীন মহাপক্ষীর ছায়ার মতো বিশাল এবং একই সঙ্গে মহান হয়ে উঠতে পেরেছে, একথা আজ আর অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। দোসরহীনরকম কঠোর আর নির্মমতম কোমল এই সমস্তকবিতার মুকুরে এই কবি কেবল নিজেরই অচেনা মুখ দেখেননি, দেখেছেন ঈশ্বরীর অধরা সেই অবয়বওÑযার কোনো বর্ণ নেই, আকার নেই, শুধু রয়ে—যাওয়া আছে। বাংলা কবিতার পাঠক এই কাব্যগ্রন্থে চোখ রেখে নিশ্চিতভাবেই শিহরিত হবেন; তাঁর মনে পড়ে যাবেই সেইসব কমলা রঙের রৌদ্রস্মৃতি আর কাকাতুয়া—পায়রার ওড়াওড়ির ছায়াময় অভিজ্ঞতাÑযা আজও মূল্যবান, মহামূল্যবান।
Book Name : | হাসপাতালে লেখা কবিতাগুচ্ছ |
Authors : | বিনয় মজুমদার |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition, December 2014 |
ISBN Number: | 978-984-91026-8-7 |
Total Page | 64 |
বিনয় মজুমদার ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ বার্মার মিকটিলা জেলার টোডোতে জন্মগ্রহণ করেন। বৌলতলি হাই—ইংলিশ স্কুলের ম্যাগাজিনে প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৯৪৮ সালে কলকাতায় আসেন। মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। সেখান থেকেই প্রথম বিভাগে স্কুল ফাইনাল পাস করেন। এরপর প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আই.এস.সি পাস করেন। শিবপুর বি.ই. কলেজের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন। ত্রিপুরা গভর্নমেন্ট কলেজে অল্পকিছুদিন শিক্ষকতাও করেন। তারপর শিক্ষকতা ছেড়ে স্থির করেন শুধুই কবিতা লিখবেন। শুরু হয় ‘ফিরে এসো, চাকা’। এই সময়ে তিনি দুর্গাপুর স্টিল প্লান্টেও কিছুদিন কাজ করেন। তখন থেকেই মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ দেখা যায়। ১৯৬৬ সালে লিখতে শুরু করেন ‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’ ও ‘ঈশ্বরীর স্বরচিত নিবন্ধ’। ১৯৮৪ সালে বাবা—মা দুজনেই মারা যান। সংসারে খুবই একা হয়ে পড়েন, আবার মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি রবীন্দ্রপুরস্কার ও আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। ১১ ডিসেম্বর ২০০৬ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।