আবুল হাসান মাত্র দশ বছর (১৯৬৫—১৯৭৫) কবিতা লেখায় মগ্ন ছিলেন। এই অল্প সময়ে রচিত এই কবির কবিতারাশি বাংলা কবিতার আবহমান ধারায় বিশিষ্টতা অর্জন করতে পেরেছে। তাঁর সমকালীন অগ্রজ দুজন কবির মূল্যায়ন—
গ্রামীণ ও নাগরিক জীবনের মিলিত অভিজ্ঞতা আবুল হাসানের কবিতাকে বর্ণাঢ্য, সমৃদ্ধ করেছে।
আবুল হাসান যৌবনের বিষণ্ণতা, নৈঃসঙ্গ্য এবং দীর্ঘশ্বাসের কবি। তাঁর শিল্প—সৌন্দর্যবোধ যেমন তীক্ষè তেমনি তীব্র মানুষের প্রতি তাঁর মমতা, জীবনের প্রতি ভালোবাসা। আবুল হাসান মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত কবি, কবি ছাড়া আর কিছুই নন।
—শামসুর রাহমান
আবুল হাসান জাতকবির স্বভাব নিয়ে জন্মেছিলেন। অসংযত, বিদ্রোহী, তীব্র, দুর্বল ও স্পর্শকাতর—সবই তিনি জন্মসূত্রে পেয়েছিলেন কিংবা অর্জন করেছিলেন। আর এক—এক সময় তাঁকে প্রশান্ত হতে দেখেছি—তবে কবিতা লেখার সময় সর্বদাই ছিলেন গম্ভীর অর্থে প্রশান্ত ও ধ্যানী। তিনি স্থিত ও শুদ্ধতার কবি, মন্ময় কবি। মন্ময়—এই শব্দটির মধ্যেই রয়েছে এক ধরনের একাকিত্বের লক্ষণ; কিন্তু এতে যে আভা বিচ্ছুরিত হয়, তা ধ্যানী ও মরমিয়া। খুব সম্ভব এই বিশৃঙ্খল যুগেও ধ্যানী কবি তিনি। কোনো কোনো অর্থে মরমীও।
আবুল হাসানের ছিল ঈর্ষণীয় কবিত্বশক্তি। তাঁর কবিতা আমার ভালো লাগে। তিনি আমার সমকালীন প্রিয় কবিদের একজন। শুদ্ধতায়, পরিচ্ছন্নতায়, নির্বাচনে তিনি ছিলেন আমার মনের অত্যন্ত কাছাকাছি। তাই সামাজিক অর্থে না হলেও তিনি আমার আত্মীয়।
—সিকদার আমিনুল হক
Book Name : | প্রেমের কবিতা সমগ্র । আবুল হাসান |
Authors : | আবুল হাসান |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition, February 2019 |
ISBN Number: | 978-984-93599-7-5 |
Total Page | 160 |
আবুল হাসান ১৯৪৭ সালের ২৭ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়ার বর্নি গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরের ঝনঝনিয়া গ্রামে। তিনি ঢাকার আরমানিটোলা সরকারি বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে এসএসসি এবং ১৯৬৫ সালে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে ভর্তি হলেও মধ্যপথে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার ইতি ঘটান। ১৯৬৯ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের বার্তা বিভাগে যোগদানের মাধ্যমে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। পরবর্তীকালে দৈনিক গণবাংলা (১৯৭২—১৯৭৩), দৈনিক জনপদ (১৯৭৩—৭৪) পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আবুল হাসানের প্রকাশিত গ্রন্থ : রাজা যায় রাজা আসে (১৯৭২), যে তুমি হরণ করো (১৯৭৪), পৃথক পালঙ্ক (১৯৭৫)। তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় ‘আবুল হাসানের অগ্রন্থিত কবিতা’ (১৯৮৫), কাব্যনাট্য ‘ওরা কয়েকজন’ (১৯৮৮), ‘আবুল হাসানের গল্প’ (১৯৯০)। জীবদ্দশায় আবুল হাসান উল্লেখযোগ্য কোনো পুরস্কার পাননি। মরণোত্তর পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৫), একুশে পদক (১৯৮২)। আবুল হাসান ১৯৭৪ সালের ১৯ নভেম্বর জার্মানির বার্লিন যান চিকিৎসার জন্য, ফিরে আসেন ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর মাত্র আটাশ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।