“নদী কি তার নিজের দুঃখে কেঁদেছিল? নদী কেঁদেছিল তাদের দুঃখেই।”
যাত্রীদের অনেকে নিচের পথ ধরেছে। আমিও তাদের দলে ভিড়ে পড়ি।
পরে স্টিমারঘাটে ভিড়বার জন্যে অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে অপেক্ষা করছি তখন তবারক ভুইঞার শেষোক্তিটি সহসা মনে পড়ে। কিছুক্ষণ আগে ওপরে সে বলেছিল, নদী যদি কেঁদে থাকে তবে নিজের দুঃখে নয়, কুমুরডাঙ্গার অসহায় অধিবাসীদের দুঃখেই কেঁদেছিল। হয়তো সবই সে জানে, হয়তো কথাটি বলবার সময়ে মুহাম্মদ মুস্তফার কথাই সে ভেবেছিল।
স্টিমার ধীরে—ধীরে ঘাটের পাশাপাশি হয়, তার চতুষ্পাশে^র্ উচ্ছৃঙ্খল পানি শতশত হিংস্র সরীসৃপের মতো গর্জন করে। তবে সহসা আমার মনে হয় নদী যেন নিষ্ফল ক্রোধেই কাঁদছে। হয়তো নদী সর্বদা কাঁদে, বিভিন্ন কণ্ঠে, বিভিন্ন সুরে, কাঁদে সকলের জন্যেই। মনে মনে বলি : কাঁদো নদী কাঁদো।
Book Name : | কাঁদো নদী কাঁদো |
Authors : | সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition, March 2021 |
ISBN Number: | 978-984-95510-0-3 |
Total Page | 152 |
জন্ম : ১৫ আগস্ট ১৯২২। পিতামাতার দ্বিতীয় সন্তান তিনি। পারিবারিক পরিমণ্ডলের এই সাংস্কৃতিক আবহাওয়া সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র মনন ও রুচিতে প্রভাব ফেলেছিল। তাঁর আনুষ্ঠানিক ডিগ্রি ছিল ডিস্টিঙ্কশনসহ বিএ এবং অর্থনীতি নিয়ে এমএ ক্লাসে ভর্তি হয়েও শেষে পরিত্যাগ করেন। পঠদ্দশাতেই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র কর্মজীবন শুরু হয়। বাধ্য হয়ে নয়, স্ব—ইচ্ছায়। তাঁর স্ত্রী ফরাসিনী। নাম : আন্—মারি লুই রোজিতা মার্সেল্ তিবো। তাঁদের দু’সন্তান। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘নয়নচারা’ [ছোটগল্প, ১৯৪৫], ‘লালসালু’ [উপন্যাস, ১৯৪৯], ‘বহিপীর’ [নাটক, ১৯৬০], চাঁদের অবাবস্যা [উপন্যাস, ১৯৬৪], ‘সুড়ঙ্গ’ [নাটক, ১৯৬৪], ‘তরঙ্গভঙ্গ’ [নাটক, ১৯৬৫], দুই তীর ও অন্যান্য গল্প [ছোটগল্প, ১৯৬৫], কাঁদো নদী কাঁদো [উপন্যাস, ১৯৬৮]। তিনি ১৯৫৫ সালে ‘বহিপীর’ নাটকের জন্য পি.ই.এন. পুরস্কার পান। ১৯৬১ সালে উন্যাসের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারে সম্মানিত হন এবং ১৯৬৫—তে ‘দুই তীর ও অন্যান্য গল্প’ গ্রন্থের জন্য আদমজী পুরস্কার লাভ করেন। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের ফলে মাত্র ঊনপঞ্চাশ বৎসর বয়সে, ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।