বাংলা প্রতিবাদী কাব্যধারায় রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ এক অনিবার্য নাম। সকল অসাম্য, শোষণ, স্বৈরাচার ও সা¤প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ উচ্চারণ তাঁকে পরিণত করেছে ‘তারুণ্যের প্রতীক’—এ। একই সঙ্গে দ্রোহ ও প্রেমের, শাণিত উচ্চারণ ও শিল্পবোধের মেলবন্ধনই রুদ্রের কবিতার মৌল শক্তি। রুদ্র সম্পর্কে অগ্রজ কবিদের মন্তব্যও এই সত্যের স্মারক—
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ প্রতিবাদী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর কবিতার শরীর থেকে নান্দনিক গুণাবলি ঝেড়ে ফেলেননি। ছন্দ বিষয়ে তাঁর মনোযোগ আমাকে মুগ্ধ করেছে, কারণ এটি আমাদের তরুণ কবিদের মধ্যে একটি বিরলদৃষ্ট গুণ। তাঁর অকালমৃত্যু আমাদের কাব্যক্ষেত্রের জন্যে এক মস্ত ক্ষতি।
—শামসুর রাহমান
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ আমাদের সেই দুচারজন কবির অন্যতম যাঁরা সম্মিলিত কবিকর্মের ভিতর দিয়ে এই ভূখণ্ডে কর্মে নিয়োজিত মানুষের পেশী ও শ্রমের কবিতার নন্দন তৈরি করছিলেন। তাঁর অকালমৃত্যুতে সাহিত্যের বড় ক্ষতি হল।
—মোহাম্মদ রফিক
যে—কেন্দ্র থেকে রুদ্রের অভিযাত্রা শুরু, বহুপথ ঘুরে, বহু চড়াই—উৎরাই পেরিয়ে, জীবনের স্বপ্ন ও সংগ্রাম, প্রেম ও বিরহ, বন্ধন ও বিচ্ছেদ সব কিছুর মধ্যেও কেন্দ্রাতিগ—সংলগ্নতা থেকে সে বিন্দুমাত্রও বিচ্যুত হয়নি। পথ চলতে বারবার হেঁাচট খেয়ে, রক্তাক্ত হয়েও সে কখনো আত্মবিক্রিত ক্রীতদাসে পরিণত হয়নি।
—অসীম সাহা
তীব্র ইতিহাস—সচেতন, স্বকাল—সচেতন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষাবলম্বী এই চিরতরুণ কবি নিঃসঙ্গ এক আত্মিক যাত্রা শুরু করেছিল নতুন এক সভ্যতার স্বপ্নে—‘দিন আসবেই, দিন আসবেই, দিন সমতার’। সকলের মাঝে থেকে, সব আন্দোলনের অগ্রভাগে নিজেকে সংস্থাপিত করেও সে ঘোষণা করেছিল, ‘আমি একা, এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে একটি বিন্দুর মতো আমি একা’।
—মুহম্মদ নূরুল হুদা
Book Name : | প্রেমের কবিতা সমগ্র । রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ |
Authors : | রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition, February 2021 |
ISBN Number: | 978-984-95113-7-3 |
Total Page | 176 |
কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জন্ম ১৬ অক্টোবর ১৯৫৬ (২৯ আশ্বিন ১৩৬৩)। পিতা ডা. শেখ ওয়ালীউল্লাহ ও মাতা শিরিয়া বেগম। পৈতৃক নিবাস বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার অন্তর্গত সাহেবের মেঠ গ্রামে। শৈশব কেটেছে নানাবাড়ি মিঠেখালি গ্রামে ও মোংলায়। পড়াশুনা করেছেন মোংলার সেন্ট পলস হাইস্কুল, ঢাকার ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্কুল—জীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। সম্পাদনা করেছেন বেশ কয়েকটি সাহিত্যপত্র। ‘সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট’ ও ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ’ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা। ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ’—এর প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক। গীতিকার হিসেবেও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ১৯৮৯ সালে মিঠেখালিতে গড়ে তোলেন ‘অন্তর বাজাও’ নামে সংগীত দল। কবির জীবদ্দশায় প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ৭টি—উপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯), ফিরে চাই স্বর্নগ্রাম (১৯৮১), মানুষের মানচিত্র (১৯৮৪), ছোবল (১৯৮৬), গল্প (১৯৮৭), দিয়েছিলে সকল আকাশ (১৯৮৮), মৌলিক মুখোশ (১৯৯০)। মৃত্যুর পর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ এক গ্লাস অন্ধকার (১৯৯২), কাব্যনাট্য বিষ বিরিক্ষের বীজ (১৯৯২) ও গল্পগ্রন্থ সোনালি শিশির (২০০৫)। এছাড়া তাঁর সমগ্র রচনা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে রুদ্রসমগ্র। উপদ্রুত উপকূল ও ফিরে চাই স্বর্নগ্রাম কাব্যগ্রন্থের জন্য ‘মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার’ প্রাপ্তি। ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ গানের জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণোত্তর) সম্মাননা লাভ। ১৯৯১ সালের ২১ জুন (০৭ আষাঢ় ১৩৯৮) ঢাকায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে এই প্রতিভাবান তরুণ কবি মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।