বিশ শতকে মানুষের চিন্তাকে উসকে দিতে পারে এমন ধরনের প্রবন্ধ-নিবন্ধ আমাদের দেশে যাঁরা লিখেছিলেন, তাঁদের রচনার কদর কি ক্ষীয়মাণ? প্রশ্নটা ওঠানো হচ্ছে ডা. লুৎফর রহমানের প্রতি দৃষ্টি রেখে। আমাদের অভিজ্ঞতায় রয়েছে এক সময় ফুটপাথ থেকে অভিজাত বইয়ের দোকানে তাঁর বই বিক্রি হতো-উচ্চ জীবন, মহৎ জীবন, উন্নত জীবন, সত্য জীবন প্রভৃতি নামের প্রকৃত জীবন ও মনোগঠনের সহায়ক সব বই। আজকে মনে হয় তা দুর্লক্ষ। অথচ সুখী-সুন্দর-সুস্থ জীবন গঠনের প্রয়োজন তো শেষ হয়ে যায়নি। শেষ হয়ে যাবেও না কখনো। তিনি মানুষকে, বিশেষ করে কিশোর-তরুণদের শেখাতে চেয়েছিলেন বংশমর্যাদা, গাড়ি-ঘোড়া, দামি পোশাক, অর্থবিত্ত, শানশওকত এসব সত্যিকার মনুষ্য-জীবনের মাপকাঠি নয়। মানুষের সত্যিকার পরিচয় পাওয়া যায় তার আচরণে তথা চরিত্রে-কথাবার্তায়, সত্যবাদিতায়, নিঃস্বার্থতায়, ভালোবাসায় ইত্যাদি সদগুণের সমাহারে। ‘জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো’-এই ছিল তাঁর জীবনদর্শন। এই দর্শন শাশ্বতিক। সর্বকালের জন্য সত্য। ভণ্ডামি, লালসা ও আত্মপরায়ণতার দুঃসময়ে আজকে আমাদের বড় বেশি প্রয়োজন লুৎফর রহমানকে পরম আশ্রয় হিসেবে গ্রহণ করা।
-হাবিব আর রহমান
Book Name : | প্রবন্ধ সমগ্র । ডা. লুৎফর রহমান |
Authors : | ডা. লুৎফর রহমান |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition, August 2019 |
ISBN Number: | 978-984-94239-1-1 |
Total Page | 0 |
১৮৯৭ (বাংলা ১৩০৪) খ্রিস্টাব্দে মোহাম্মদ লুৎফর রহমান জন্ম গ্রহণ করেন মাগুরা জেলার পারনান্দুয়ালী গ্রামের মাতুলালয়ে। তাঁর ডাকনাম ট্যোনা/টেংরা। পিতা ময়েন উদ্দীন জোয়ারদার, তিনি এন্ট্রান্স পাশ এবং কর্মজীবনে স্টেশন মাস্টার ছিলেন। মাতার নাম বেগম শামসুন নাহার। তবে গবেষকদের মধ্যে তাঁর জন্ম সাল নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। কেউ কেউ ১৮৮৯ সালকে জন্মসাল হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এতে তাঁর জীবনকাল ৪৭ বৎসর হয়। তবে লেখক পুত্র মোঃ নেয়ামত উল্লাহর দেওয়া তথ্য মতে ১৮৯৭ সাল সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়। কারণ তা না হলে সাহিত্যিকের এন্ট্রান্স (মেট্রিক) পাশ ২৫ বৎসর হয়ে যায়। কিন্তু জীবিতকাল মাত্র ৩৯ বৎসর ছিল। তার নিজ গ্রাম মাগুরা জেলার হাজীপুরে শিশুকাল, শৈশবকাল, প্রাথমিক শিক্ষা ও বেড়ে ওঠার গোড়া পত্তন এবং মাগুরা মহকুমা শহরের পরিবেশে অধ্যয়ন করা। ১৯২২ (বাংলা ১৩২৯) কলিকাতায় ৪/১/১ ছফু খানসামা লেনে ‘নারীতীর্থ’ সংগঠনের অফিস খোলেন। ‘নারীতীর্থের’ মুখপত্র হিসেবে ‘নারীশক্তি’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। কবি মঈনুদ্দীন ও মোহাম্মদ জোবেদ আলী এর সম্পাদক ছিলেন। পত্রিকার ছয়টি সংখ্যা বের হয়েছিল। উল্লেখযোগ্র গ্রন্থ : ‘মানব জীবন’, ‘মহৎ জীবন’, ‘উন্নত জীবন’, ‘উচ্চ জীবন’, ‘ধর্ম জীবন’, ‘মহা জীবন’ এবং ‘যুবক জীবন’। ৩১শে মার্চ (১৮ চৈত্র ১৩৪২ বাংলা) দীর্ঘ রোগ শয্যা অবস্থায় এই মহতী লেখক মৃত্যুবরণ করেন নিজ বাড়ি তৎকালীন মাগুরা মহকুমার হাজিপুর গ্রামে। সেখানেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।