আক্ষরিক অনুবাদ আমার কর্ম না। মূল মেঘদূত ভাব অবলম্বন করে স্বতন্ত্র একধরনের রচনামাত্র। পদ্যানুবাদে কালিদাস্য কাব্যভাব ও কাব্যভঙ্গি- যথাযথ প্রকাশ করা আমার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। আমি যা করতে চেয়েছি তা হলো আধুনিক কাব্য পাঠককে কালিদাসের মঞ্চস্থাপত্যের সামনে দাঁড় করিয়ে দিতে- তাঁদের পরিচিত এবং স্পর্শগ্রাহ্য বাংলাভাষার মাধ্যমে। মন্দাক্রান্তা অনিবার্যভাবেই বদলেছে। তবু যতটা পেরেছি ব্যবহৃত ছন্দকে একটি মহাকাব্যের প্রতি সম্মানজনক সাবলীলতায় গ্রহণ করেছ। সাধুসন্ত শব্দাবলীর গায়ে গায়ে অপাংক্তেয় হেটো-বোটো শব্দ বসিয়েছি। তাতে ফল হয়েছে মারাত্মক। কালিদাসের মঞ্চই উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে! মল্লিনাথে নেই, অথচ পার্শ্বাভ্যুদয়ে আছে-এমন পাঁচটি শ্লোক বাহুল্যবোধে আমি বর্জন করেছি।
Book Name : | কালিদাসের মেঘদূত |
Authors : | শক্তি চট্টোপাধ্যায় |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition, February 2017 |
ISBN Number: | 978-984-92459-7-1 |
Total Page | 48 |
শক্তি চট্টোপাধ্যায়। জন্ম : ২৬ নভেম্বর ১৯৩৩। বর্তমান বাংলাসাহিত্যের বিশেষ জনপ্রিয় কবি। সাহিত্যজীবনের গোড়ায় গল্পরচনায় মনোযোগী ছিলেন। স্ফুলিঙ্গ সমাদ্দার নামে বেশ কিছু গল্প লেখেন। তাঁর কাহিনি রচনার ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যাবে ‘কুয়োতলা’ (১৯৫৫) নামক উপন্যাসে। ‘কবিতা’ পত্রিকায় তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় তবে ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকাকে অবলম্বন করেই তাঁর কবিখ্যাতির বিস্তার। তাঁর প্রথমভাগের কবিতায় শক্তির উদ্দামতা, নিয়মশাসিত জীবনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, ছন্নছাড়া, নিয়মভাঙা জীবনযাপনের গৌরবায়ন, প্রচলিত অনুশাসনের বিরোধিতা দেখা দেয় এবং মূলত এক বোহেমিয়ান আচরণের দ্বারা তাঁর কাব্যজীবন চিহ্নিত হয়। পরবর্তী পর্বে এই উত্তালতা স্তিমিত হয়ে আসে, নারী, প্রকৃতি, বন্ধুত্ব, মানব সংসর্গ, জীবনের আনন্দ ও ব্যর্থতার বোধ নিয়ে গড়ে ওঠে তাঁর কাব্যজগৎ। প্রকৃতির অপরাধবোধ তাঁর কাব্যজগতের প্রধান উপকরণ। তাঁর কবিতাকে বিশিষ্টতা দিয়েছে তাঁর নিজস্ব ছন্দস্পন্দ এবং বলিষ্ঠ ভাষা। তাঁর প্রধান কাব্যগুলির মধ্যে ‘হে প্রেম হে নৈঃশব্দ্য’ (১৯৫৭), ‘হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান’ (১৯৬৯), ‘ছিঁড়ে ফেলি ছন্দ তন্তুজাল, যেতে পারি কিন্তু কেন যাব’ (১৯৮২) প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর কবিতা যেমন অজ¯্র, তেমনই স্বতস্ফূর্ত। মৃত্যু : ২৩ মার্চ ১৯৯৫।