...সব বাজিকর জানে রহু চণ্ডালের হাড় কথাটাই ঐন্দ্রজালিক, বুজরুকি। তবুও সব বাজিকরই এখনো রহু চণ্ডালের হাড়ের স্বপ্ন দেখে মনে মনে ও বিশ্বাস করে তার সার্থক অস্তিত্ব সম্ভব।
রহুর হাড় লুকিয়ে আছে কোনো এক ভূখণ্ডের ফলপ্রসূ মৃত্তিকার গভীরে, যে স্থানটি বাজিকরকে খুঁজে বের করতে হবে। সেই স্থানটি খুঁজে বের করবার জন্যই বাজিকরের এই ভূ—পরিক্রমণ।...
যাযাবর বাজিকররা আজো খুঁজে বেড়াচ্ছে তাদের বীজপুরুষ রহু চণ্ডালের হাড়।
...সে এক অপরিচিত দেশ। যেখানে ঘর্ঘরা নামে এক পবিত্র নদী বয়ে যায়। সেখানে নাকি কবে এক শনিবারের ভূমিকম্পে সব ধূলিসাৎ হয়েছিল। ঘর্ঘরার বিশাল এক তীরভূমি ভূ—ত্বকে বসে গিয়ে নদীগর্ভের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। আর তাতে মিশে গিয়েছিল গোরখপুরের বাজিকরদের জীর্ণ বাড়িঘর। ধ্বংস হয়েছিল বাজিকরদের প্রধান অবলম্বন অসংখ্য জানোয়ার।
লুবিনি সেই পুবের দেশের কথা শারিবাকে বলে, যে পুবের দেশের কথা দনু পীতেমকে বলেছে, পীতেম বলেছে পরতাপ, জামির আর লুবিনিকে, জামির বলেছে রূপাকে।... কিন্তু কোথায় যে সেই স্থির দেশটি, যেখানে আছে বাজিকরের স্থিতিস্থায়িত্ব, সেকথা কেউই জানে না। প্রতিবারই কোনো না কোনো আঘাত, সে আঘাত মানুষের সৃষ্ট হোক কিংবা প্রকৃতির সৃষ্ট হোক, বাজিকরকে দিশাহারা করেছে।...
এই যাযাবর বাজিকরদের স্থায়ী কোনো নিবাস নেই। কেবলই জায়গা বদলায়। তাদের বিশ্বাস তাদেরও একসময় এক দেশ ছিল।
অভিজিৎ সেন মহাকাব্যিক আবহে অত্যন্ত নিপুণতায় লিখেছেন ‘রহু চণ্ডালের হাড়’ উপন্যাস। এই উপন্যাসে বিবৃত হয়েছে যাযাবর বাজিকর সম্প্রদায়ের জীবন—আখ্যান।
Book Name : | রহু চণ্ডালের হাড় |
Authors : | অভিজিৎ সেন |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition, February 2019 |
ISBN Number: | 978-984-94102-0-1 |
Total Page | 272 |
অভিজিৎ সেনের জন্ম ১৯৪৫ সালের ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশের বরিশাল (বর্তমানে ঝালকাঠি জেলা) জেলার কেওড়া গ্রামে। দেশভাগের পর গত শতকের পাঁচের দশকের একেবারে শুরুতে পশ্চিমবঙ্গে গমন। কলকাতা, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া হয়ে ফের কলকাতাÑ এভাবে ঘুরে ঘুরে স্কুল—কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করার আগেই চাকরি শুরু করেন কলকাতার একটি জেনারেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে। ১৯৬৩—১৯৬৯, এই ছয় বছর চাকরি করার পর চাকরি, ঘর ও কলকাতা ত্যাগ করে সেই সময়কার নকশালপন্থী আন্দোলনে যোগ দেন। পরবর্তীকালে রাজনীতি ত্যাগ করে উত্তর বাংলার বালুরঘাট শহরে বসবাসকালে ফের চাকরিতে যোগ দেন এবং সমবায় ও গ্রামীণ ব্যাংকে ৩১ বছর চাকরির সূত্রে উত্তরের তিনটি ও মুর্শিদাবাদ জেলায় ব্যাপক ঘোরাফেরা। এইভাবে গ্রামবাংলার সমাজ ও অর্থনীতির সঙ্গে গভীর পরিচয়। তারপর লেখালেখি শুরু। কথাসাহিত্যিক হিসেবে পাঠকমহলে সমাদৃত। তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থ : রহু চণ্ডালের হাড়, দেবাংশী, অন্ধকারের নদী, ছায়ার পাখি, অঁাধার মহিষ, বিদ্যাধরী ও বিবাগী লখিন্দর, হলুদ রঙের সূর্য, স্বপ্ন ও অন্যান্য নীলিমা, মেঘের নদী, নিম্নগতির নদী, মৌসুমি সমুদ্রের উপকূল, লাশকাটা ঘরের সামনে অপেক্ষা, পঞ্চাশটি গল্প, অভিজিৎ সেনের গল্প, শ্রেষ্ঠ গল্প, গধমরপ ইড়হবং. অভিজিৎ সেন ১৯৯২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রবর্তিত বঙ্কিমচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার এবং ২০০৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার—এ ভূষিত হয়েছেন।