সহস্র শৈবালদাম বাঁধে সেই নদীটিরে যে জীবনহারা অচল, অসাড়। পদে পদে বাঁধা জীর্ণ লোকাচারে। মানুষ যেন নদীর মতোই। আঁগল পড়লেই বাঁধা, স্থবির। নগরসভ্যতার আদিমতম মুহূর্তে ভবঘুরের, পরিব্রাজকের জীবন হতে মুক্তি নিয়েই যেন সে বাঁধা পড়েছে শতেক দ্বিধায়, ব্যস্ত রয়েছে নানা আয়োজনে- দুশ্চিন্তায়। গৃহত্যাগী, যাযাবরের রোমাঞ্চের পরিবর্তে নিজস্বীর বৃত্তাবদ্ধ মানবজনমেই সে যেন বন্দি। ভুলে বসেছে বিশ্বপাথার, খোঁজ রাখে না মহামূল্য মণিমুক্তার। অথচ ভবঘুরেরাই বদলেছে বিশ্ব নিখিল। দেখতে-জানতে এবং দুনিয়াটাকে বদলাতে তাই এগিয়ে আসতে হবে ভবঘুরেদেরই। প্রথম যৌবনেই ভবঘুরে হয়ে বদলাতে হবে নিজেকে, দুনিয়াকেও। এমনটাই লিখেছিলেন ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তক-কথক-ভবঘুরে রাহুল সাংকৃত্যায়ন। অনবদ্য- অসামান্য এক রচনায়, ভবঘুরে শাস্ত্র। নিজের জীবনের প্রথম সাড়ে চার দশক ভবঘুরে বৃত্তিধারী রাহুল পাঠককে যেন আহ্বান জানিয়েছেন এই বলে- থামতে যদি হয় কখনো, শিখবে বলেই থেমো। একটু থেমে, ভুলটা ভেঙে-এগিয়ে আবার চলো। ভবঘুরে শাস্ত্র, আমাদের এগিয়ে চলার সাহস জোগায়।
.
.
নেহাত পর্যটনের জন্য নয়, অজানাকে জানার জন্যই এই অবিরাম ছুটে চলা। জাগতিক তাগিদের ঊর্ধ্বে উঠে।
ঘুম, ভুল ভেঙে—গান করতে করতে। নতুন পথ খুঁজে,
পুরোনো পথ ছেড়ে চলে যাওয়া অন্য পথের সীমানায়। ভবঘুরের জীবন, যাত্রাপথের আনন্দ গানের।
নিজেই সে মহাজীবন কাটিয়ে ১৯৪৮ সালে রাহুল সাংকৃত্যায়ন হিন্দিতে লিখেছিলেন ‘ঘুমাক্কর শাস্ত্র’। বাংলায় অনুবাদ করেন রণজিৎ সিংহ। কেন মানুষের দিকশূন্যপুরের খোঁজে বেরিয়ে পড়া উচিত, এবং কেন সেটা যৌবনেই—তাই নিয়ে অমলিন, অনাবিল জীবনের সানন্দযাপনের আহ্বান, ‘ভবঘুরে শাস্ত্র’।
Book Name : | ভবঘুরে শাস্ত্র |
Authors : | রাহুল সাংকৃত্যায়ন |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition May 2025 |
ISBN Number: | 978-984-95043-5-1 |
Total Page | 136 |
পায়ে হেঁটে ঘুরেছেন সমগ্র ভারতবর্ষ। বুদ্ধকে গুরু, শিক্ষক মানতেন। প্রব্রজ্যা নিয়েছেন, তিব্বত থেকে বৌদ্ধ পুথিও উদ্ধার করেছেন। সাম্য, মৈত্রীর টানে গিয়েছেন সোভিয়েত। জাতীয়তাবাদের ছক ভেঙে নিজেকে বারবার নতুন করে গড়েছেন। ১৮৯৩ সালে জন্মেছিলেন উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে, কেদারনাথ পাণ্ডে নামে। একটু একটু করে হয়ে উঠেছিলেন রাহুল সাংকৃত্যায়ন। ছিলেন একই সঙ্গে কর্মী, পণ্ডিত। বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাকারী। অথচ কলকাতার রাস্তার সাইনবোর্ড, পোস্টার দেখে শিখেছেন ইংরেজি পড়তে। সমাজতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে লাসায় বসে প্রচারপত্র লিখেছেন। ‘অল ইন্ডিয়া কিষান সভা’র সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। হিন্দি ভ্রমণ সাহিত্যের জনকের শিরোপাও একান্তই তাঁর। দার্জিলিংয়ে ১৯৬৩ সালে ৭০ বছরের পরিণত চিন্তক রাহুল সাংকৃত্যায়নের মৃত্যু হয়। যিনি লিখেছেন, ‘নানা অভিমতকে আমি গ্রহণ করেছি একটা নৌকার মতো যাতে নদী পেরিয়ে বিপরীত দিকে যেতে পারি কিন্তু সেই অভিমতগুলোকে এমন বোঝা করে তুলিনি যাতে মনটাই পাষাণভার হয়ে যায়।