সাংখ্যিক সমষ্টি নয়, সমষ্টিকে অতিক্রম করে রবীন্দ্রনাথ মানুষের মধ্যে একটি বৃহৎ ও গভীর ঐক্যের ধারণা উপলব্ধি করেছিলেন। সেই ইন্দ্রিয়বোধাতীত ঐক্যের বিনষ্টি ঘটে তখন, তিনি লিখেছেন, যখন আমরা নিজেকে ‘...টাকায় দেখি, খ্যাতিতে দেখি, ভোগের আয়োজনে দেখি। এই নিয়েই তো মানুষের যত বিবাদ, যত কান্না। মানুষের মানবসত্তা সম্পর্কে এ ধরনের বিকৃত বোধই জাতিতে জাতিতে শত্রুতা, শ্রেণিতে শ্রেণিতে সংঘাত, শোষণ অত্যাচার ইত্যাদি যাবতীয় জাগতিক সমস্যার মূলে।’ কিন্তু কবে থেকে মানুষের মধ্যে জেগেছে এই লোভ—মোহ—বিদ্বেষ? সেমেটিক কাহিনি অনুযায়ী মানবসৃষ্টির একেবারে আদি থেকেই। বাইবেলে অ্যাডাম—ইভের ছেলে কেইন ও আবেল, আর মুসলিম—কাহিনিতে আদম—হাওয়ার ছেলে কাবিল ও হাবিল। আবেলের প্রতি ঈশ্বরের পক্ষপাতিত্বের কারণে ক্রুদ্ধ কেইন বিদ্বেষবশে হত্যা করে ছিল কনিষ্ঠকে।
বাইবেলের অতি ক্ষুদ্র এই কাহিনিতে মেদ—মজ্জা—রক্ত—মাংস সংযোজন করে শাহ্যাদ ফিরদাউস লিখেছেন অভিনব ও অসাধারণ উপন্যাস কানানগণ। এতে ভ্রাতৃঘাতী দ্বন্দ্বের কারণ দেখানো হয়েছে বিদ্বেষ নয়, লোভ—সম্পদ প্রাপ্তির দুর্দম্য বাসনা। সেই শুরু। তারপর সময় অতিক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে তার ছেদহীন বাড়বাড়ন্ত। এখন আর সে কেবল ভ্রাতৃঘাতী নয়, আত্মঘাতীও। সভ্যতার মর্মে—লেগে—থাকা এই দুর্মোচনীয় কালিমা অসামান্য ঔপন্যাসিক—নৈপুণ্যে নির্মাণ করা হয়েছে কানানগণ—এ।
হাবিব আর রহমান
Book Name : | কানানগণ |
Authors : | শাহ্যাদ ফিরদাউস |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition, August 2017 |
ISBN Number: | 978-984-92879-7-1 |
Total Page | 80 |
জন্ম ২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৫০। প্রথম জীবনে কবিতা লিখতেন। পরবর্তীকালে সিনেমা এবং উপন্যাসের বিষয়ে আগ্রহী হন। কয়েকটি তথ্যচিত্র এবং গৌতম বুদ্ধর জীবন ও অহিংসা—দর্শনের ওপর একটি কাহিনিচিত্র তৈরি করেন। এছাড়া সামাজিক কাজের সঙ্গেও তিনি ছোটবেলা থেকে যুক্ত। বর্তমানে কলকাতার রুশ দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গোর্কি সদন—এর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত সাহিত্য সংগঠন প্রগতি সাহিত্য সংবাস—এর সম্পাদক। বিশ্বের শান্তি আন্দোলনকে ভারতীয় প্রেক্ষাপটে জোরদার করার লক্ষ্যে সমমনা সাথীদের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত কলকাতা পীস্ মুভমেন্ট—এর সম্পাদক। জাতপাত—ধর্ম—বর্ণ ও অন্যান্য সামাজিক বৈষম্যের ঊর্ধ্বে উঠে কীভাবে শিশুদের অন্তরে শান্তির বীজ বপন করা যায় তার চর্চা ও প্রয়োগের জন্য তিনি শিক্ষাবিদ বন্ধুদের নিয়ে পীস্ স্কুল নামে একটি ব্যতিক্রমী শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। ১৯৯৩ সালে ব্যাস উপন্যাস প্রকাশের মাধ্যমে তিনি নতুনভাবে সাহিত্যজগতে ফিরে আসেন। তারপর থেকে এ পর্যন্ত কুড়িটি উপন্যাস লিখেছেন। তাঁর রচনা পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তভুর্ক্ত, কিছু তরুণ গবেষক তাঁর উপন্যাস নিয়ে ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন।