কাজী নজরুল ইসলাম। দু’দশকের মুখর সাহিত্যিক জীবন। বাংলা ভাষার-গানের- সুরের-সাহিত্যের উজ্জ্বল আলোকস্তম্ভ। সৃষ্টির বিপুলা এক পৃথ্বী। সংখ্যার বিচারে ছোটগল্প তাতে সামান্যই। অথচ কথকতায়, ঘটনায় নজরুল যেন নিজের ছায়া রেখে চলেন সেথায়। আত্মজীবনী নয়, আত্মপ্রতিকৃতি নয়। অথচ চিন্তা-চেতনায়, মানসিকতায়, ভাবনায় গল্পের প্রধান কুশীলবেরা যেন তারই ছায়া। সৃজিত সাহিত্যের মতোই বিদ্রোহের প্রতিশব্দ নজরুলের জীবনও ছিল বিচিত্র আর বহুবর্ণিল। নিজের প্রতিটি গল্পে সেই বর্ণিল নজরুলের চির উন্নত শির উঠে দাঁড়িয়েছে বিশ্ব নিখিল ছাড়িয়ে।
কণ্ঠে তাঁর হাসি, কণ্ঠে তাঁর গান, প্রাণে তাঁর অফুরান আনন্দ। মুখর তিনি, নির্ভীক-দুর্দমনীয়। বাঙালির সমন্বিত সংস্কৃতির বিভা-লাবণ্য ছড়ায়ে তিনি উচ্ছল-উজ্জ্বল সৃষ্টিসমগ্রে। ‘বিদ্রোহী কবি’ পরিচয়েই প্রতিভাত হলেও তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনাটি ছিল গল্প। যার সদ্যোজাত কবিতা মুদ্রণ-পুনঃমুদ্রণ হয়েছে নানা পত্রিকায় সেই কবির প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থটিও কিন্তু ছিল গল্পগ্রন্থ। অনন্য গল্পকথক হিসেবে বাঙালির বিদ্রোহের প্রতীক কাজী নজরুল ইসলাম সম্প্রসারিত করেছেন বাংলা কথাসাহিত্যের সীমানাকে। কবিতা ও গানের মতো তাঁর গল্পেও প্রভাবকের দায়িত্ব পালন করেছে বাঁধনহারা জীবন। অথচ প্রকাশিত গল্পগ্রন্থের সংখ্যা মোটে তিন। আর গল্পসংখ্যা মাত্র ১৯। বিষয়বৈচিত্র্যে, শৈলী-সংস্থানে এবং ভাষারূপে যার প্রতিটিই মৌলিক ও স্বতন্ত্র। গদ্যের এই জগৎটি মমত্বে, দায়িত্বশীলতায় ও আন্তরিকতায় রচেছিলেন নজরুল। ঔপনিবেশিক কালাকানুন-প্রথা-জাতভেদ উড়িয়ে দিয়ে তাঁর গল্পের চরিত্ররা যোগ দিয়েছিল মুক্তি সৈন্যদের দলে, বলেছিল ভালোবাসার কথা। নজরুল রচনার অসামান্যত্ব এখানেই যে তার প্রতিটি চরিত্রই যেন দেশ-কালের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক। মহাযুদ্ধোত্তর হতাশা, অবক্ষয় আর বিপর্যয়ের অন্দর হতে বাংলার আকাশে উত্থিত হয়েছিলেন বিদ্রোহী এক ধূমকেতু। যার কলম বলেছে দরিদ্র কৃষক, নিগৃহীত শ্রমজীবী মানুষের কথা। ডাক দিয়েছে সুবিধাভোগী শ্রেণির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। যিনি সুর দিয়েছিলেন বাঙালির প্রাণে, উদ্দাম যৌবনে।
Book Name : | গল্পসমগ্র । কাজী নজরুল ইসলাম |
Authors : | কাজী নজরুল ইসলাম |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition August 2024 |
ISBN Number: | 978-984-98947-8-0 |
Total Page | 240 |
স্বাধীনতা, মানবতা, প্রেম ও বিপ্লব ছিল তাঁর অনন্য সাধারণ সাহিত্যের মূল সুর। লেখক হিসেবে ছিলেন মৌলবাদ, বর্ণবাদ, লিঙ্গবিদ্বেষ ও ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটি সংগ্রামে, আন্দোলনে, বিশেষত মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় কবি। কাজী নজরুল ইসলাম। জন্ম ১৮৯৯ সালের ২৪ মে, পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়ায়। বাংলা সাহিত্যের চিরবিদ্রোহী কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও নজরুল ছিলেন একাধারে সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, রাজনীতিবিদ, গায়ক ও অভিনেতা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ৪৯ নম্বর বাঙালি পল্টনের সৃষ্টিশীল সৈনিক নজরুল ‘লাঙল’, ‘নবযুগ’ ও ‘ধূমকেতু’র মতো সংবাদপত্রও সম্পাদনা করেছেন। কবিতার জন্য গিয়েছেন সাম্রাজ্যবাদীর কারাগারে। আদর্শের বলে লড়েছেন নির্বাচনে। অসংখ্য বিচিত্র রাগ-রাগিণীর স্রষ্টা সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে রচেছেন তিন হাজারের বেশি গান। দেশাত্মবোধক গান, শ্যামাসংগীত, গজলে তাঁর জুড়ি বাংলায় আজও নেই। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সম্মানসূচক ডি.লিট’, ভারতে ‘পদ্মভূষণ’, বাংলাদেশে ‘একুশে পদক’ ও ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’-এ ভূষিত হন তিনি। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয় চিরবিদ্রোহী কবিকে।