আমাদের শীর্ষ কবিদের অন্যতম শহীদ কাদরী। তিনিই গতশতকের ষাটের দশকে বাংলাদেশের কবিতাকে বিশ্ব—অভিমুখে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। ফলে আমাদের কবিতা আধুনিকতার সমীপবর্তী হতে পেরেছিল। তাঁর এই আধুনিক বৈশ্বিক অভিমুখিতার উৎস ছিল পশ্চিমী সাহিত্য, সংস্কৃতি আর বৌদ্ধিক বিষয়আশয়ের ব্যাপক বিস্তৃত পঠনপাঠন। সৃষ্টিশীল লেখা তো তিনি পড়তেনই, সেইসঙ্গে তাত্ত্বিক, জ্ঞানতাত্ত্বিক আর তথ্যমূলক গ্রন্থ। আধুনিক জীবনকে স্পর্শ করে এমন সবধরনের বিষয়ে তাঁর ছিল অনিঃশেষ আগ্রহ। একারণেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত, অসুস্থতা সত্ত্বেও, নিবিড়ভাবে পত্র—পত্রিকা আর গ্রন্থ পাঠ করে গেছেন। সাহিত্য—সংস্কৃতি সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবেই তাঁর ছিল নিজস্ব ভাবনা আর দৃষ্টিভঙ্গি। অগ্রন্থিত শহীদ কাদরী শীর্ষক এই গ্রন্থটির গদ্যগুলিতে পাওয়া যাবে তাঁর সাহিত্যভাবনার ধ্বনি—প্রতিধ্বনি। বলা বাহুল্য, এই গদ্যগুলি এতদিন অগ্রন্থিত ছিল, এমনকী দুর্লভও। পাঠকেরা এই প্রথম তাঁর গদ্যরচনা পাঠের মধ্য দিয়ে শহীদ কাদরীর বৌদ্ধিক গহনতাকে উপলব্ধি করতে পারবেন, যে বিদ্যাবত্তার জন্যে তিনি ঘনিষ্ঠজনদের কাছে কিংবদন্তি হয়ে আছেন। তাঁর গদ্য যেমন তথ্যে—তত্ত্বে— অভিজ্ঞানে উজ্জ্বল, তেমনি প্রকাশভঙ্গিও প্রাতিস্বিকতায় দ্যুতিময়। গভীর পঠনপাঠন আর পাণ্ডিত্যের নির্যাস। আধুনিক ভাবার্পনধর্মী গদ্যগ্রন্থ হিসেবে এটি তাই একটি অবশ্যপাঠ্য গ্রন্থ।
মাসুদুজ্জামান
কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Book Name : | অগ্রন্থিত শহীদ কাদরী |
Authors : | শহীদ কাদরী |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition, August 2020 |
ISBN Number: | 978-984-94933-3-4 |
Total Page | 72 |
১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকায় শহীদ কাদরীর জন্ম। ১৯৪৬—এর দাঙ্গা ও ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের পর শহীদ কাদরীদের পরিবারটি পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে পূর্ববঙ্গে আসার উদ্যোগী হলেও দেশ ছাড়ে ১৯৫২ সালে। তাঁর বাবা খালেদ ইবনে আহমেদ কাদরী সেই সময়ের ‘জুটবোর্ড’—এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৫০ সালে শহীদ কাদরীর বাবার মৃত্যু হলে নানা টানাপোড়েন শেষে শহীদ কাদরীর মা মাহমুদা কাদরী তিন সন্তান নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। অন্য দুই সন্তান হলেন শাহেদ কাদরী, নাফিজা কাদরী। এরপর প্রায় তিন দশক শহীদ কাদরী ঢাকা শহরে অবস্থান করেন। ১৯৭৮ সাল থেকে তাঁর প্রবাস জীবন শুরু হয়। তিনি বার্লিন, লন্ডন, বোস্টন এবং মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত নিউইয়র্কে বসবাস করেছেন। বিচিত্র পেশায় সংশ্লিষ্ট হলেও কোথাও বেশি দিন থিতু থাকেননি। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে শহীদ কাদরী প্রথম কবিতা ছাপা হয় বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত কবিতা পত্রিকায়। তার দীর্ঘ কাব্যজীবনে প্রকাশিত কাব্যের সংখ্যা ৪টি। পঁচিশ বছর বয়সে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্য উত্তরাধিকার (১৯৬৭)। এরপর ১৯৭৪ সালে তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা, কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই এবং প্রবাসে থাকাকালীন বেরোয় আমার চুম্বনগুলো পেঁৗছে দাও (২০০৯)। এই চারটি গ্রন্থে সন্নিবেশিত কবিতার সংখ্যা ১২২টি। পরবর্তীতে তিনি আরও চারটি কবিতা লেখেন। বাংলা কবিতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য শহীদ কাদরী বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৩), একুশে পদক (২০১১) লাভ করেন। শহীদ কাদরী ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।