বাঙালির এক চিরকালীন মাস্টারমশাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। প্রতিষ্ঠানে কিংবা সামাজিক জীবনে, ধর্মীয় বিশ্বাসে কিংবা বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তিবাদিতায়, চরম কঠোরতায় কিংবা পরম করুণায়- বিদ্যাসাগরের জীবন ও কর্ম অধ্যয়ন আজও বাঙালির জীবনে একটি অবশ্যপাঠ্য গ্রন্থের মতো গুরুত্বপূর্ণ। বাঙালি রেনেসাঁর অন্যতম প্রবাদপ্রতিম এই প্রাণপুরুষের জীবন সম্পর্কে আজও মানুষের সমান আগ্রহ। শিশুমনে আদর্শ-ভক্তি-নিয়মানুবর্তিতার বীজ বপন করার জন্যে গুরুজনেরা আজও শিশুদেরকে বিদ্যাসাগরের গল্প বলে শোনান।
ইন্দ্রমিত্র রচিত ‘বিদ্যাসাগরের ছেলেবেলা’ বইটি মূলত একটি শিশুতোষ রচনা। তবে পরিণত বয়সের বিভিন্ন ঘটনাও প্রাসঙ্গিকভাবে স্পর্শ করেছে এই বইটিকে। বিদ্যাসাগরের পূর্বপুরুষের ইতিহাস, তাঁর পারিবারিক পরিচয়, জন্মকাহিনি, গ্রামের পরিস্থিতি, শৈশবের চমকপ্রদ ঘটনাবলি, কলকাতায় আগমন, বাবার সাথে বাসাবাড়িতে অবস্থানপূর্বক নানারকম দায়দায়িত্ব পালন, হিন্দু স্কুল এবং সংস্কৃত কলেজে অধ্যয়ন প্রভৃতি প্রসঙ্গ বিধৃত হয়েছে এই বইয়ে। উত্তরকালে পর্বতপ্রতিম অবিচলপ্রতিজ্ঞ, সূর্যের মতো তেজোদীপ্ত, আকাশের মতো উদার, পাষাণের মতো কঠোর, মহীরুহের মতো মায়াময় ছায়াময় আশ্রয় এবং করুণাঘন যে বিদ্যাসাগরের আশীর্বাদ লাভ করে বাংলাদেশের মানুষ ধন্য হয়েছে সেই বিদ্যাসাগরের আভাস ছেলেবেলায় ঈশ্বরচন্দ্রের চরিত্রের মধ্যে প্রকাশিত হয়ে উঠেছিল। এ বই ঈশ্বরচন্দ্রের ‘বিদ্যাসাগর এবং করুণাসাগর’ হয়ে ওঠার প্রস্তুতিপর্বের আখ্যান।
Book Name : | বিদ্যাসাগরের ছেলেবেলা |
Authors : | ইন্দ্রমিত্র |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition, February 2019 |
ISBN Number: | 978-984-94103-6-2 |
Total Page | 0 |
আসল নাম অরবিন্দ গুহ। ছদ্মনাম ইন্দ্রমিত্র নামেই বেশি পরিচিত। জন্ম ১৯২৮ সালের ২০ ডিসেম্বর তৎকালীন অবিভক্ত বাংলাদেশের বরিশালে। পড়াশোনার সূচনাও বরিশালে। ব্রজমোহন স্কুলে ও কলেজে। ১৯৪৫ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৪৭—এ ইন্টারমিডিয়েট। সেখানে ব্রজমোহন কলেজে জীবননানন্দ দাশের সান্নিধ্যে আসেন অরবিন্দ গুহ। প্রথম কাব্য ‘দক্ষিণ নায়ক’ থেকেই তাঁর মধ্যে সম্ভাবনা দেখেছিলেন জীবনানন্দ। অরবিন্দ গুহ পরে সরকারি চাকরি নেন কলকাতায়। অবসর নেন ১৯৮৬—তে। কবিতা ছাড়াও গদ্যে তিনি সাবলীল। কবিতার পাশাপাশি ‘ইন্দ্রমিত্র’ ছদ্মনামে অরবিন্দ গুহ লিখতে শুরু করেন গবেষণাধর্মী রচনা। বঙ্গরঙ্গমঞ্চের নেপথ্য ইতিহাসের কাহিনি নিয়ে লেখা তাঁর ‘সাজঘর’ গ্রন্থটি প্রকাশমাত্রই বিপুলভাবে সংবর্ধিত হয়। ১৯৬২—তে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নরসিংহদাশ পুরস্কার’ দেওয়া হয় তাঁকে। এরপর সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে লিখতে শুরু করেন ‘করুণাসাগর বিদ্যাসাগর’। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অসাধারণ এক জীবনকথা। ‘করুণাসাগর বিদ্যাসাগর’ গ্রন্থটির জন্য ইন্দ্রমিত্রকে রবীন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় ১৯৭২ সালে। ইন্দ্রমিত্রের গবেষণাজাতীয় গ্রন্থতালিকায় পরবর্তী সময়ে যুক্ত হয়েছে নিপাতনে সিদ্ধ। সজনীকান্ত দাশ ও শনিবারের চিঠিকে কেন্দ্র করে উল্লেখযোগ্য কাজ এই বই। ইন্দ্রমিত্রের রচিত ‘আপনজন’ গল্পটি অবলম্বন করে রূপায়িত দু—দুটি চলচ্চিত্র। বাংলা ও হিন্দি ভাষায়। যথাক্রমে তপন সিংহ—পরিচালিত ‘আপনজন’ এবং গুলজার—পরিচালিত ‘মেরে আপনে’। ৩ জুন, ২০১৮ সালে ইন্দ্রমিত্রের (অরবিন্দ গুহ) জীবনাবসান ঘটে। তাঁর স্ত্রী, প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী পূরবী গুহ এবং মেয়ে গৌরী দাশগুপ্ত ।