বাঙালির জীবনের তিমির, বাধার বিন্ধ্যাচল উড়িয়ে যে বিদ্রোহ এসেছিল তাঁর নাম- কাজী নজরুল ইসলাম। ঔপনিবেশিক শাসনে রুদ্ধ-নিমজ্জিত প্রতিটি মুক্তিকামীর জাতীয়তা বোধ, স্বাধীনতার আশায় তিনি ছিলেন উচ্চকিত। শুধু নিজেরই নয়, সেই সঙ্গে সমাজের- মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তিকেও বোঝার চেষ্টা যে করেছিলেন সাম্যবাদী এই বিদ্রোহী। যে সক্ষমতা নজরুল অর্জন করেছিলেন কেবল যুক্তি দিয়েই নয়, আবেগ দিয়েও। আবার এও সত্যি যে, নজরুল শুধুই আবেগপ্রবণ ছিলেন না; আবেগের উদ্দাম শক্তিকে তিনি কাজেও লাগিয়েছিলেন। নজরুলের যুক্তি, তাঁর রাজনীতি প্রবলে প্রতিভাত হয়ে ওঠে প্রবন্ধে। কলমকে হাতিয়ার করে যখন তিনি সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্নের কথা বন্ধু-পাঠককে বলেন সেসময়। নজরুলের স্বপ্নের শক্তি এমনই যে তাঁর প্রথম প্রবন্ধ সংকলনটিই বাজেয়াপ্ত হয়, যুগবাণী। ঔপনিবেশিক শোষকরা পরাধীন ভারতবর্ষের ‘জাতীয় বিপ্লবের সার্থক সাহিত্যিক প্রতিভূ’ নজরুলের কবিতা-গানকে শুধু নয়, তাঁর প্রবন্ধকেও শত্রু ঘোষণা করে। মানুষের ভাবনার বহুত্ববাদী উজ্জ্বল কাঠামোর দেদীপ্যমান স্মারক নজরুলের প্রবন্ধ উদ্ভাসিত শোষণের বিরুদ্ধতায়, চিন্তার প্রকরণে, শিক্ষায়। আর স্বতন্ত্র এক পৌরুষদীপ্ত স্বরে। যা নজরুলের যাবতীয় বিশ্বাস, উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা নিয়েও একই সঙ্গে শৈল্পিকভাবে স্বকীয়।
.....................................................................................................................................................................................................................................................
মানুষের ‘মানুষ’ পরিচয়টাকেই তিনি বড় করে দেখেছেন, দেখিয়েছেন। না-জাত, না-ধর্ম—কোনো দিকে কাউকে ছোট করেননি, ভাবেননি। তিনি আমাদের সাম্যবাদী—আমাদের সুরের বুলবুল। কাজী নজরুল ইসলাম। দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, ‘আমি পরম আত্মবিশ্বাসী। তাই যা অন্যায় বলে বুঝেছি, তাকে অন্যায় বলেছি, অত্যাচারকে অত্যাচার বলেছি, মিথ্যাকে মিথ্যা বলেছি, কাহারো তোষামোদ করি নাই, প্রশংসা ও প্রসাদের লোভে কাহারো পিছনে পোঁ ধরি নাই।’ অনলবর্ষী সম্পাদকীয়তে, অভিভাষণে, প্রকাশভঙ্গির সারল্যে— ‘ধূমকেতু’, ‘নবযুগ’ ও ‘লাঙলে’র সম্পাদক নজরুলের প্রবন্ধ অনন্য, অবশ্য পাঠ্য।
Book Name : | প্রবন্ধসমগ্র । কাজী নজরুল ইসলাম |
Authors : | কাজী নজরুল ইসলাম |
Publisher: | Inhouse book |
Edition: | 1st Edition November 2024 |
ISBN Number: | 978-984-98948-9-6 |
Total Page | 232 |
স্বাধীনতা, মানবতা, প্রেম ও বিপ্লব ছিল তাঁর অনন্য সাধারণ সাহিত্যের মূল সুর। লেখক হিসেবে ছিলেন মৌলবাদ, বর্ণবাদ, লিঙ্গবিদ্বেষ ও ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটি সংগ্রামে, আন্দোলনে, বিশেষত মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় কবি। কাজী নজরুল ইসলাম। জন্ম ১৮৯৯ সালের ২৪ মে, পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়ায়। বাংলা সাহিত্যের চিরবিদ্রোহী কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও নজরুল ছিলেন একাধারে সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, রাজনীতিবিদ, গায়ক ও অভিনেতা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ৪৯ নম্বর বাঙালি পল্টনের সৃষ্টিশীল সৈনিক নজরুল ‘লাঙল’, ‘নবযুগ’ ও ‘ধূমকেতু’র মতো সংবাদপত্রও সম্পাদনা করেছেন। কবিতার জন্য গিয়েছেন সাম্রাজ্যবাদীর কারাগারে। আদর্শের বলে লড়েছেন নির্বাচনে। অসংখ্য বিচিত্র রাগ-রাগিণীর স্রষ্টা সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে রচেছেন তিন হাজারের বেশি গান। দেশাত্মবোধক গান, শ্যামাসংগীত, গজলে তাঁর জুড়ি বাংলায় আজও নেই। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সম্মানসূচক ডি.লিট’, ভারতে ‘পদ্মভূষণ’, বাংলাদেশে ‘একুশে পদক’ ও ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’-এ ভূষিত হন তিনি। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয় চিরবিদ্রোহী কবিকে।